Image description
 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ভারতকে ক্ষেপণাস্ত্র খাতে সহায়তা করতে ৩৫০ পাউন্ডের (৪৬৮ মিলিয়ন ডলার) চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তারা। এই চুক্তি অনুযায়ী অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা খাতে অংশীদারত্বের অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ব্রিটেনের তৈরি হালকা ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হবে।

স্টারমার এক বছর ধরে উচ্চতর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা খাতের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া, ন্যাটো লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন

ব্রিটেন বৃহস্পতিবার আরো জানিয়েছে, তারা ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎচালিত নৌজাহাজের ইঞ্জিনের জন্য একটি চুক্তিতে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন। কারণ উভয় দেশ প্রাথমিকভাবে ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।


গত জুলাই মাসে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যকার বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের উপায় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছেন নরেন্দ্র মোদি।

২০৪০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরো ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন পাউন্ড (৩৪ বিলিয়ন ডলার) বৃদ্ধি করার কথা আলোচনা হয় বৈঠকে। সেজন্য দুই দেশের টেক্সটাইল পণ্য থেকে শুরু করে হুইস্কি ও গাড়ির ওপর শুল্ক কমানোর মাধ্যমে বিশ্বের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতির বাজারে প্রবেশাধিকার প্রদানের বিষয়ে সম্মত হয় তারা।

স্টারমার জানান, এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো বাণিজ্যিক চুক্তির সম্ভাবনাকে দ্বিগুণ করা, যা আগামী এক বছরের মধ্যে কার্যকর হবে। ভবিষ্যতে কয়েক হাজার দক্ষ কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বড় ধরনের নতুন বিনিয়োগ নিশ্চিত করার আশা করেন তিনি। বৈঠকে স্টারমার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে নয়াদিল্লির দীর্ঘদিনের ইচ্ছাকে সমর্থন করেন।

এর আগে বুধবার দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে উন্নত প্রযু্ক্তি, ডিজিটাল বাণিজ্য, ক্লিন এনার্জি নিয়ে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার কথা জানায় ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানায়, ৬৪টি ভারতীয় কোম্পানির সম্মিলিতভাবে ব্রিটেনে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন পাউন্ড (১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগ রয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী, ব্রিটেনের পণ্যের ওপর ভারতের গড় শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমে ৩ শতাংশ হবে। এদিকে যুক্তরাজ্য ভারতীয় পোশাক, জুতা, অলংকার ও সামুদ্রিক খাবারের ওপর কর কমাবে। অন্যদিকে স্কচ হুইস্কি, প্রসাধনী, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ওপর কর কমাবে ভারত।

বৈঠকে ভারতে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আরো ক্যাম্পাস খোলার ঘোষণা দেন স্টারমার। এর ফলে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে জানানো হয়।

বর্তমানে ভারতে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্রমবর্ধমান ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে ভারতে যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় বেলফাস্টের ক্যাম্পাস খোলার কথা রয়েছে।

একশ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সাংস্কৃতিক নেতার সঙ্গে দুদিনের বাণিজ্য মিশনে বর্তমানে মুম্বাইয়ে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণকালে স্টারমার ও মোদির কয়েক হাজার আলোকচিত্র টাঙিয়ে তাদের স্বাগতম জানানো হয়।