Image description
 

গত বছর এপ্রিল মাসে আমি লিখেছিলাম—গাজায় গণহত্যা চালানো, পশ্চিম তীরে দখলদারিত্ব, প্রতিবেশীদের ওপর হামলা, আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার আইনকে তাচ্ছিল্য করার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত ইসরায়েলকে 'দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র' ঘোষণা করা। সেই থেকে এক বছরও পার হয়নি, এর মধ্যেই আরও অনেক ঘটনা এই দাবিকে সত্য প্রমাণ করেছে।

সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে ইসরায়েল হামলা চালায় কাতারে, যেটি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছে। তখনও গাজা এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গাজা শহরের শেষ বেঁচে থাকা উঁচু ভবনগুলোও এখন ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ যারা আগেও বারবার বাস্তুহারা হয়েছে, তাদের আবারও দক্ষিণে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। যদিও ইসরায়েল দক্ষিণকে "মানবিক অঞ্চল" বলছে, বাস্তবতা হলো—গাজার কোথাও ফিলিস্তিনিরা নিরাপদ নয়।

এর মধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তাব ১৪২টি দেশ সমর্থন করেছে। প্রস্তাবে দু-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের পথে "বাস্তব, সময়সীমা নির্ধারিত ও অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ" নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আবার এতে হামাসকে সব বন্দি ছেড়ে দেওয়া, গাজা শাসন ছাড়তে এবং অস্ত্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাবটি ১২টি দেশ, যার মধ্যে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রও আছে, তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই ভোট যখন হয়, তখন গাজা জ্বলছে, পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনি গ্রামগুলো একে একে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। তখন কি আর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কথা বলা অর্থপূর্ণ? এই রাষ্ট্র কার জন্য? কী জন্য?

এর আগেই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাদ ছিল মূলত উত্তর গোলার্ধের ধনী কিছু রাষ্ট্র। এবার ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মাল্টা, বেলজিয়াম ভোট দিলেও, তারা নৈতিক উচ্চতায় নেই। তারা অপেক্ষা করেছে দুই বছর—যখন ইসরায়েলি গণহত্যায় অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত, তারপর ভোট দিল। তারা ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সবসময় উপেক্ষা করেছে।

তাদের অনেকেই নিজেরাই অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে ইসরায়েলের গণহত্যাকে সহায়তা করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার বলেছেন, যদি ইসরায়েল যুদ্ধ থামে, তবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে—এ যেন এক ধরণের শাস্তির ভাষা, ন্যায়বিচারের নয়। কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও অনেক শর্ত চাপিয়েছে—যেমন, হামাস থাকবে না, অস্ত্র থাকবে না, নির্বাচন করতে হবে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সংস্কার করতে হবে। অথচ ইসরায়েলের উপর কোনো শর্ত নেই।

তারা কথা বলে ইসরায়েলের নিরাপত্তার। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার কথা কে বলবে?

এটাই তো হয়েছে আগেও। ওসলো চুক্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের নিশ্চয়তা ছিল না। ছিল আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া। সেই থেকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ যেন হয়ে গেছে এক দখলদার রাষ্ট্রের সহযোগী। ফিলিস্তিনি সংগ্রামের ভিতরে থেকেই ক্ষয় ধরেছে।

যদি পশ্চিমা দেশগুলো সত্যিই সমাধান চায়, তাহলে ফিলিস্তিনি অধিকারকেই কেন্দ্র করে সমাধান খুঁজতে হবে। নইলে এইসব স্বীকৃতি, ঘোষণা—সবই একধরনের ভান। আর গণহত্যা চলতে থাকবে, কেউ কিছু বলবে না।