Image description

অদক্ষ শাসন ও দুর্নীতি ঠেকাতে নেপালে জেনজিরা দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দোলনে সংসদ ভবন পুড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবেশী ভারতীয়দের মধ্যে, এই সহিংসতা অনলাইনে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে: এটি ধরা হচ্ছে ধর্মীয় বিদ্রোহ হিসেবে। বাংলাদেশের গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেও ধর্মীয় প্রলেপ দিয়েছিলো ভারতের সংবাদমাধ্যম।

এবার নেপালের ঘটনায় ভারতের কিছু মানুষ দাবি করছে, এই বিক্ষোভগুলো ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের দাবি হিসেবে, অন্যরা বলছে, এর উল্টো — এটি  বিশ্বাসের ওপর আক্রমণ।

এই ধারণাকে শক্তিশালী করছে ভারতীয় সম্প্রচারক ও রাজনীতিবিদদের অভিযোগ যে, ভাঙচুরকারীরা নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরকে ভাঙচুর করেছে, যা হিমালয়ের দেশটির একটি পূজ্য হিন্দু স্থান।

ডানপন্থি জি নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলের একটি রিপোর্টে একজন উপস্থাপক বলেন, ‘কিছু দাঙ্গাবাজ, যারা প্রতিবাদকারীদের ভিড়ে লুকিয়ে ছিল, মন্দিরটি ভাঙচুর করার চেষ্টা করেছিল, এবং এই ঘটনার পরই সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।’ রিপোর্টে দেখা যায় মানুষ মন্দিরের গেটে ওঠে এবং তা জোর করে নাড়াচাড়া করে।

ভারতের শাসক ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পূর্ব বিহার রাজ্যের সদস্য জিভেশ মিশ্র বুধবার সংবাদদাতাদের বলেছেন, ‘মন্দিরে আক্রমণ হিন্দু ধর্মের ওপর আক্রমণ।’

 

ডানপন্থি প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই দাবি তাদের হাজার হাজার অনুসারীর কাছে প্রসারিত করেছেন।

কিন্তু এএফপি ফ্যাক্ট-চেকাররা ফুটেজটির উৎস খুঁজে বের করেছেন, যা মূলত নক্ষল ভাগবতী জাত্রা নামে একটি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, যা সহিংসতার কয়েক সপ্তাহ আগে রেকর্ড করা হয়েছিল।

মন্দিরের সুপরিচিত সন্ন্যাসী কে.এন. স্বামীও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্লিপ পোস্ট করেছেন, যা মন্দির আক্রমণ হয়েছে এমন দাবিকে খণ্ডন করছে।

তিনি বুধবার এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন, ‘আমি বর্তমানে মন্দিরের ভিতরে আছি, এবং সবকিছু শান্তিপূর্ণ।’

নেপালের প্রতিবাদ সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হয়, যেখানে যুবকরা নিজেদেরকে ‘জেন জি’ আন্দোলন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

বিক্ষোভগুলো দেশব্যাপী জনস্রোতে পরিণত হয়েছে, সরকারের ভবনগুলো আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে প্রানঘাতি দমনপীড়নের পর। প্রতিবাদকারীরা কেপি শর্মা ওলির বাড়িতে আগুন দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

ভূল ব্যাখ্যা ছড়াচ্ছে ভারতের উগ্রপন্থিরা

শত শত সামাজিক মিডিয়া পোস্ট প্রমাণ ছাড়া দাবি করা হয়েছে, এই প্রতিবাদ ‘হিন্দুবিরোধী শক্তি ও ইসলামপন্থিদের দ্বারা প্ররোচিত ও অর্থায়িত’ হয়েছে যাতে ধর্মীয় স্থানগুলোতে আক্রমণ করা যায়।

২০০৮ সাল থেকে সেকুলার প্রজাতন্ত্র নেপাল হিন্দু রাষ্ট্রের পুনঃস্থাপনের দাবি করা দলগুলোর নিয়মিত প্রতিবাদ দেখেছে।

 

এক্স, ইনস্টাগ্রাম, থ্রেডস এবং ফেসবুকে হাজার হাজার বার দেখা বিভিন্ন পোস্টগুলোতে নেপালের অস্থিরতার তুলনা করা হয়েছে বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে, যেখানে গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন।

এদিকে, ‘হিন্দু নেশন’ - বিজেপির একটি জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ, যেটি ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে ট্রেন্ডিং রয়েছে।

পোস্টগুলোতে ভারতে ‘অনুরূপ যুব বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত’ হওয়া নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো প্রশান্ত দাস বলেন, ‘ভারতে দ্রুত সংবাদ প্রকাশের তাগিদ বেশি, এবং এর ফলে তাদের পক্ষ থেকে ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এখন যা ছড়িয়ে আছে তা হল জল্পনা এবং গুজব, যা এই ধরনের পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।’

গতকালের ফুটেজে প্রতিবাদকারীরা হিন্দু রাজতন্ত্রের দাবি করছিলেন, যা মিথ্যাভাবে শেয়ার করা হয়েছে যে নেপালের “জেন জি” আন্দোলন মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু ভারতীয় উগ্রপন্থিরা দাবি করছে, এই আন্দোলন ধর্মের ওপর ভিত্তি করে।

আরও একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, প্রতিবাদকারীরা ভারতের প্রভাবশালী হিন্দু সন্ন্যাসী যোগী আদিত্যনাথকে নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চেয়েছেন।