Image description
 

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নিরবচ্ছিন্ন বিমান ও স্থল হামলায় একদিনে অন্তত ৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। কেবল গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন ৪৪ জন। লাগাতার বোমাবর্ষণে পুরো নগরী পরিণত হয়েছে মৃত্যুভয়ে আচ্ছন্ন এক ‘আতঙ্কের নগরীতে’।

 

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর অবিরাম গোলাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে গাজা সিটির পাড়া-মহল্লা। কেউ আশ্রয়ের খোঁজে পালালেও উপত্যকার কোথাও নিরাপত্তা মিলছে না। টানা ২৩ মাস ধরে চলছে এই হামলা।

 

ইউনিসেফ গাজা সিটিকে ইতোমধ্যে অভিহিত করেছে ‘আতঙ্কের নগরী’ হিসেবে। বৃহস্পতিবার তাল আল-হাওয়া এলাকায় এক তাঁবুতে বিমান হামলায় একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। ঘটনার পর ভাঙাচোরা তাঁবুর পাশে ফিলিস্তিনিরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মালামাল গোছাতে দেখা যায়। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হয় রক্তে ভেজা একটি শিশুদের গোলাপি স্যান্ডেল। প্রত্যক্ষদর্শী ইসরা আল-বাসুস এএফপিকে বলেন, ‘আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়ল, শরীরে টুকরো এসে লাগল, আমার চার সন্তান আতঙ্কে চিৎকার শুরু করল।’

 

গাজা সিটির জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়াবহ বোমাবর্ষণ হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, তুফাহ এলাকায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। শুজাইয়ায় এক আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুইজন প্রাণ হারান এবং জেইতুন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আল-ঘাফ পরিবারের তিন সদস্যের লাশ।

আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, মানুষ নিরাপত্তার খোঁজে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছুটছেন, কিন্তু যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই নতুন করে বিমান ও গোলাবর্ষণের শিকার হচ্ছেন তারা। অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন শেখ রাদওয়ান এলাকায়, কিন্তু ইসরায়েলি ট্যাংকের আক্রমণে ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং তাঁবুতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালগুলোতেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। আল-শিফা হাসপাতালে মরদেহের সারি ঠাঁই পেয়েছে মর্গের মেঝেতে। বাইরে শোকে ভেঙে পড়া এক মা তার সন্তানকে ধরে কাঁদছিলেন—‘আমাকে ফেলে কোথায় গেলে, বাবা? কেন?’

ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রাম সতর্ক করেছেন, প্রায় ১০ লাখ মানুষ এখন আটকা পড়েছেন এই ‘ভয়, পালানো ও জানাজায় ভরা নগরীতে’। শুধু বৃহস্পতিবারই গাজা সিটিতে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন।

ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, তারা বর্তমানে গাজা সিটির প্রায় ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং অভিযান আরও তীব্র করা হবে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি স্যাটেলাইট ছবিতে অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান জেইতুন এলাকায় মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, গত ২৫ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উত্তর ও মধ্য গাজা সিটি থেকে পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু দক্ষিণ গাজায় আশ্রিতদের অবস্থাও একইভাবে নাজুক। খান ইউনিসে চার মাস আগে গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা গর্ভবতী নারী শুরুক আবু ঈদ বলেন, ‘কোনও গোপনীয়তা নেই, শান্তিও নেই।’ নতুন করে উত্তর দিক থেকে মানুষের ঢল নামায় দুর্দশা আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

উপত্যকার সর্বত্র মৃত্যু ও ধ্বংস নেমে আসছে। নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে এক হামলায় সাতজন নিহত হন, যাদের মধ্যে তিনজন শিশু। রাফাহতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি চালালে সাতজন প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে আহত হন।

বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের স্থল ও বিমান হামলায় একদিনেই নিহত হয়েছেন ৭৫ জন ফিলিস্তিনি।