
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে আবারও তাণ্ডব চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। রামাল্লার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আল-মুগাইয়ির গ্রামে প্রায় ৩ হাজার জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অন্তত ৩০টিরও বেশি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভাঙচুর করেছে স্থানীয়দের সম্পদ ও গাড়ি। ঘটনার পর থেকে পুরো গ্রামটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। (খবর আল জাজিরার)
গ্রাম পরিষদের প্রধান জানান, চার হাজার মানুষের বসবাস এ গ্রামে। মাত্র ০.২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, জলপাই গাছগুলো পাশের অবৈধ বসতি এলাকায় যাতায়াতকারী প্রধান সড়কের জন্য ‘নিরাপত্তা হুমকি’ তৈরি করছিল।
তবে ফিলিস্তিনিদের কাছে জলপাই গাছ শুধু অর্থনৈতিক সম্পদ নয়—এটি তাদের সংস্কৃতি, শেকড় ও অস্তিত্বের প্রতীক। কয়েক দশক ধরে দখলদার সেনারা অধিকৃত ভূখণ্ডে এ ধরনের গাছ ধ্বংস করে আসছে। বিশ্লেষকদের মতে, কৃষিজমি ধ্বংস ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করা ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি সেনাদের দমননীতি ও বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বহুগুণে বেড়েছে। এতে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জোরপূর্বক উচ্ছেদ হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত পশ্চিম তীরজুড়ে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৩৭০টিরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৮৫টি হামলা হয়েছে রামাল্লায় এবং ৪৭৯টি হামলা হয়েছে নাবলুসে।
একই সময়ে ইসরায়েলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় অন্তত ৬৭১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১২৯ জন শিশু।
আল জাজিরার মন্তব্য চাইলে ইসরায়েলি বাহিনী কোনো সাড়া দেয়নি। তবে ফিলিস্তিনি গবেষক হামজা জুবাইদাত বলেন, ‘এই ধ্বংসযজ্ঞ ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ। ১৯৬৭ সাল থেকে একই কৌশল অনুসরণ করা হচ্ছে।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, কৃষিপ্রধান গ্রাম আল-মুগাইয়িরের মানুষ জীবিকার জন্য কৃষি ও পশুপালনের ওপর নির্ভরশীল। যে জমি থেকে ৩ হাজার জলপাই গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে, সেটি রামাল্লা অঞ্চলের সবচেয়ে উর্বর কৃষিজমিগুলোর মধ্যে অন্যতম।