
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ৬৭৪তম দিন পার হয়েছে রোববার। দীর্ঘ এ আগ্রাসনে নির্বিচারে সাধারণ গাজাবাসীকে হত্যা করে চলেছে ইসরাইলি সেনারা। একইসঙ্গে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সর্বাত্মক অবরোধের জেরে ছড়িয়ে পড়া দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারাচ্ছেন স্থানীয়রা। ২২ মাসের আগ্রাসনের মধ্যে দুর্ভিক্ষের জেরে অনাহারে অন্তত ১০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে গাজায়।
রোববার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অনাহারে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। এ নিয়ে পুরো আগ্রাসনে গাজায় অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭ জনে। অনাহারে মোট মৃতের মধ্যে ১০০টি শিশু রয়েছে।
এদিকে রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বিবৃতিতে বলা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৬১ জন নিহত ও ৩৬৩ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২২ মাসের আগ্রাসনে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১ হাজার ৪৩০ ও আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ২১৩ জন।
এছাড়া আমেরিকা-ইসরাইলের ব্যবস্থাপনায় ত্রাণ কেন্দ্র থেকে খাবার নিতে গিয়ে ইসরাইলি সেনাদের আক্রমণে নিহত হয়েছেন ৩৫ এবং আহত হয়েছেন ৩০৪ জন। এ নিয়ে গত ২৭ মে থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৭৮ জন ও আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৯৪ জনে।
রোববার ভোর থেকে স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত পুরো গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহতের তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা। স্থানীয় হাসপাতালগুলোর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি এ তথ্য জানায়। নিহতদের মধ্যে ২৩ জন ত্রাণকেন্দ্র থেকে খাবার আনতে গিয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন।
এর মধ্যে ইসরাইলি সরকারের গাজা দখলের পরিকল্পনার প্রতিবাদে তেল আবিবসহ ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করা হয়েছে। শনিবার রাতে এ বিক্ষোভ থেকে গাজায় অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য চুক্তির দাবি করা হয়।
বিক্ষোভ থেকে গাজায় আটক থাকা সাবেক জিম্মি এলিয়া কোহেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আমাকে ঘরে ফিরতে সাহায্য করায় আপনাকে ধন্যবাদ। এখন দয়া করে বাকিদের নিরাপদে ঘরে ফিরতে একটি চুক্তির জন্য সাহায্য করুন।’
তেল আবিবে বিক্ষোভ দমন করতে ইসরাইলি পুলিশ হামলা চালালে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় অন্তত তিনজনকে আটক করা হয় বলে জানায় ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম।
গাজা দখলে ইসরাইলি পরিকল্পনার প্রতিবাদে শনিবার ব্রিটেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে ফিলিস্তিনি অধিকার সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এবং গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শত শত লোক রাস্তায় নামে। লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে ফিলিস্তিনি পতাকা ও আগ্রাসনবিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভে আসেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের সংহতিতে এ বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৪৬৬ বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করে। গত মাসে গ্রুপটিকে নিষিদ্ধ করে আইন পাস করা হয়।
এছাড়া তুরস্ক, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, ম্যাসিডোনিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ হয়।
ইসরাইলের গাজা দখলের পরিকল্পনার জেরে জরুরি বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। স্থানীয় সময় রোববার সকাল ১০টায় আমেরিকার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়ার অনুরোধে এ বৈঠক হচ্ছে।