
নিজেদের দখলদার মানচিত্রের পরিধি বাড়াতে গিয়ে উল্টো কৌশলে কূল হারাতে বসেছে নেতানিয়াহু সরকার। গাজার মাটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দৃঢ়তার সামনে একটুও এগোতে পারছে না ইসরায়েল, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে একের পর এক বড় ধাক্কা খাচ্ছে। স্পেন, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ের পর এবার ফিলিস্তিনকে নিয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছে জি-৭ জোটের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র কানাডা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে কানাডা।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, অটোয়া শুরুতে দুই-রাষ্ট্র সমাধান ও শান্তি আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তির আশা করেছিল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে জাতিসংঘে সরাসরি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে কানাডা সরকার। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে—হামাস ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনের কোন রাজনৈতিক ভূমিকায় থাকতে পারবে না এবং ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচন হবে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, হামাসকে একেবারে রাজনৈতিক পরিসর থেকে বাদ দেওয়ার এই শর্ত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলকে চাপে ফেলতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতারাও আরও একধাপ এগিয়ে গেছে। ইইউ-এর ৪০ জন ক্রস-পার্টি এমপি এক যৌথ বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছেন—ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করা হোক, এবং জাতিসংঘ সনদ ও জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের দায়ে নেতানিয়াহু সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে জবাবদিহিতার মুখে ফেলতে হবে। একইসাথে হামাসকেও ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
ইসরায়েলি যুদ্ধনীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে ইতোমধ্যে বড় ধাক্কা দিয়েছে নেদারল্যান্ডস। তেলআবিব সরকারের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইটামার বেন গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ডাচ সরকার। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা গাজার সাধারণ মানুষকে স্বেচ্ছায় অভিবাসনে বাধ্য করার উসকানি দিয়েছে এবং যুদ্ধকে আরও উগ্রভাবে পরিচালনায় ভূমিকা রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতা বাড়িয়ে তুলছে এবং ইইউ’র অন্য সদস্য দেশগুলোও শিগগিরই একই পথ অনুসরণ করতে পারে। ফলে দখলদার নীতির মাধ্যমে কৌশলগত জয় চাওয়া নেতানিয়াহু সরকার এখন পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক চাপ ও নিন্দার মুখে পড়া এক শাসকগোষ্ঠীতে। বিশ্বমঞ্চে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির দাবির যে ঢেউ শুরু হয়েছে, তাতে পশ্চিমা বিশ্বের পরম বন্ধু ইসরায়েল এখন সত্যিই এক ঘোর সংকটে।