
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার এবং বিনিয়োগকারীদের অন্ধকারে রাখার অভিযোগে মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গসহ কোম্পানির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার আদালতে ৮০০ কোটি ডলারের একটি শ্রেণিভুক্ত মামলা (ক্লাস অ্যাকশন) শুরু হয়েছে। বুধবার একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে।
এই মামলার মূল প্রেক্ষাপট ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য রাজনৈতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে সরবরাহ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ উঠেছে, মেটা (সাবেক ফেসবুক) ইচ্ছাকৃতভাবে বিনিয়োগকারীদের তথ্য কেলেঙ্কারির ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করেনি।
কী ছিল অভিযোগের কেন্দ্রে
২০১২ সালে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) সঙ্গে ফেসবুকের করা একটি সম্মতিপত্র লঙ্ঘন করেই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে শেয়ার করেছিল ফেসবুক, এমনটাই দাবি মামলাটিতে। মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, চুক্তির বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী যেসব গোপনীয়তার তথ্য প্রকাশ করা দরকার ছিল, সেগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়েছে ফেসবুক।
এই ঘটনায় ফেসবুককে এফটিসির কাছে দিতে হয়েছে ৫১০ কোটি ডলারের জরিমানা এবং ব্যবহারকারীদের সঙ্গে করতে হয়েছে ৭২৫ মিলিয়ন ডলারের এক বিশাল সমঝোতা চুক্তি। এর বাইরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও আর্থিক জরিমানা গুনতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
এখন শেয়ারহোল্ডাররা দাবি করছেন, এই বিপুল আইনি খরচের দায়ভার জাকারবার্গসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি
সোমবার আদালতে সাক্ষ্য দেন প্রাইভেসি বিশেষজ্ঞ নিল রিচার্ডস। তিনি বলেন, "ফেসবুক যে প্রাইভেসি বিষয়ক বার্তা দিয়ে আসছিল, তা ছিল বিভ্রান্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক।"
২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মেটার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য জেফরি জিয়েন্টসও আদালতে সাক্ষ্য দেন। তিনি বলেন, “আমরা এফটিসির সঙ্গে সমঝোতা করেছি, যাতে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যেতে পারে। জাকারবার্গ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অপরিহার্য ছিলেন। তাছাড়া তার কোনো অপরাধমূলক আচরণের প্রমাণও তখন ছিল না।”
আগামী সপ্তাহে মামলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্বে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হবেন স্বয়ং মার্ক জাকারবার্গ এবং মেটার সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ।
রায়ের অপেক্ষায় বহুল আলোচিত মামলা
এই মামলার রায় ডেলাওয়্যার চ্যান্সারি কোর্ট কয়েক মাসের মধ্যে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি বাতিলের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। ফলে শেয়ারহোল্ডারদের মামলাটি পূর্ণাঙ্গ বিচারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এগোচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে চলমান এই বিচার শুধুমাত্র একটি কোম্পানির নয়, বরং গোটা সোশ্যাল মিডিয়া জগতের তথ্য সুরক্ষা ও জবাবদিহি নিয়ে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হতে যাচ্ছে। এর রায় ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তথ্য ব্যবহার নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।