
গত মাসে ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের সংঘাতে ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) অন্তত পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। স্যাটেলাইট তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার প্রথমবারের মতো এটি প্রকাশিত হয়েছে।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে সংগ্রহ করা রাডারভিত্তিক স্যাটেলাইট ডেটার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের সেনাঘাঁটি ও অন্যান্য সংবেদনশীল স্থাপনায় আঘাত হানে। তবে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিয়ম অনুযায়ী এসব ক্ষতির বিস্তারিত প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। তারা মনে করে, এসব তথ্য প্রকাশ করলে ইরান ভবিষ্যতে আরও নিখুঁত আক্রমণ করতে পারে।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুসারে, যেসব ঘাঁটিতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে, তার মধ্যে রয়েছে—তেল নফ বিমান ঘাঁটি, গ্লিলট ইন্টেলিজেন্স ঘাঁটি, জিপোরিত অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নির্মাণ কেন্দ্র। এই ঘাঁটিগুলোর ওপর ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। পাশাপাশি আরও ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত করে, যেগুলো ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ঢুকে পড়ে।
এই আক্রমণে ২৮ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২ হাজার ৩০৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ১৩ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান যুদ্ধকালীন ইসরায়েলের ওপর ৫০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে এবং প্রায় ১ হাজার ১০০টি ড্রোন হামলা চালায়।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম আট দিনের মধ্যে ইসরায়েলের কঠিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে ইরানের মিসাইল আক্রমণ প্রতিদিনই কিছু কিছু করে বেড়েছে। সপ্তম দিনে প্রায় ১৬ শতাংশ মিসাইল প্রতিরোধব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানতে শুরু করে।
তবে ইসরায়েলের মিসাইল প্রতিরোধের হার ঠিক কী কারণে কমে এসেছিল, তা স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ। ধারণা করা হয়, ইসরায়েল তাদের ইন্টারসেপ্টর মিসাইল সংরক্ষণের কৌশল নেয় এবং কেবল প্রয়োজনের সময়েই তা ব্যবহার করে। কারণ, এসব ইন্টারসেপ্টর ছিল অত্যধিক ব্যয়বহুল। এর আগে টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ৫ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের ২২২টি ঠেকিয়ে ১২ দিনে ইসরায়েলের খরচ হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল আগেই জানায়, ইসরায়েল তাদের অ্যারো ইন্টারসেপ্টর মিসাইলের মজুতে টান পড়ার আশঙ্কা করছিল। তবে আইডিএফ তখন এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, আগেই যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে ইরান নতুন ধরনের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যেগুলো প্রতিহত করা ইসরায়েলের জন্য ছিল কঠিন।

দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯ জুন ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্রে একটি ক্লাস্টার বোমা ওয়ারহেড ব্যবহার করে। এটি প্রায় আট কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ২০টি বিস্ফোরণ ঘটায়। এর মধ্যে আজোর শহরের আঘাত হানে একটি, যার শব্দ ও ক্ষয়ক্ষতি ছিল ছোটখাটো রকেট বিস্ফোরণের মতো।
তবে আইডিএফ সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা শুধু এটুকু বলে, ‘যেসব ইউনিটের ওপর হামলা হয়েছিল, যুদ্ধের ১২ দিন তাদের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। কোনো সমস্যা হয়নি।’
এ ছাড়া ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ওপর পাল্টা হামলা চালিয়েছে। তারা এটিকে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ‘ইসরায়েল ধ্বংসের পরিকল্পনা’ থামাতে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেছে।
অন্যদিকে ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং অস্ত্র তৈরির কোনো লক্ষ্য নেই। তবে ইসরায়েল পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, ইরান উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে।