Image description

ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক ভারসাম্যে নাটকীয় পরিবর্তন আনার আভাস দিল এক নতুন খবর। ব্রিকস নিউজ-এর অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট দাবি করেছে, চীনের জে-১০ সি যুদ্ধবিমানের প্রথম চালান আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই যুদ্ধবিমান অ্যাডভান্সড এএইসিএসএ রাডার এবং পিএল-১৫ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জে-১০ সি যুদ্ধবিমান ইসরাইলের এফ-৩৫ স্টিলথ জঙ্গি বিমানগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। ব্রিকস নিউজের তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে পশ্চিম এশিয়ার আকাশে শক্তির ভারসাম্য ইরানের পক্ষে চলে যেতে পারে। অবশ্য প্রথম চালানে কয়টা বিমান ইরানকে দেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি কয়টি চালান দেওয়া হবে তাও জানান হয়নি।

এর আগে ইরানের জনপ্রিয় দৈনিক হামশাহরি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ইরান চীনের কাছ থেকে মোট ৪০টি জে-১০ সি যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। প্রতিটি জে-১০ সি-এর দাম প্রায় ৪ কোটি মার্কিন ডলার হওয়ায় পুরো ৪০টি বিমানের সম্ভাব্য মোট মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার। তবে কেবল বিমান কেনার খরচই শেষ কথা নয়—দীর্ঘমেয়াদে এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিমানের মূল দামের প্রায় তিনগুণ হতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

হামশাহরি অনলাইনের আরেক প্রতিবেদনে এই জে-১০ সি যুদ্ধবিমানের বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, জে-১০ চীনের তৈরি অন্যতম অত্যাধুনিক কৌশলগত যুদ্ধবিমান। এই বিমানকে চীনের সামরিক স্বনির্ভরতার প্রতীক এবং ২১ শতকের অ্যারোস্পেস প্রযুক্তির অগ্রগতির দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা হয়। চেংদু এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন বা সিএসি এই বিমানটির নকশা তৈরি করেছে এবং তৈরিও করেছে। ন্যাটো চীনের এ বিমানকে “ফায়ার বার্ড” নামে ডাকলেও চীনে একে “মাইটি ড্রাগন” বলা হয়।

জে-১০ এর বিভিন্ন সংস্করণ তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে জে-১০ সি সর্বাধুনিক। পাকিস্তান ইতোমধ্যে জে-১০ সি-এর অন্যতম প্রধান ব্যবহারকারী। সাম্প্রতিক পাক-ভারত লড়াইয়ে এই বিমান তাক লাগিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি মিসর, নাইজেরিয়া, মিয়ানমার ও সৌদি আরবও এই বিমান কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে। চীনের নিজস্ব আধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির প্রয়োজনীয়তা, পুরনো জে-৭, মিগ-২১-এর চীনা সংস্করণকে বদলে ফেলা এবং তাইওয়ানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে আকাশে প্রতিযোগিতার চাপে পড়ে চীন ১৯৮৪ সালেই এই ফাইটার বিমানের ডিজাইনের কাজ শুরু করেছিল। লক্ষ্য ছিল আকাশযুদ্ধে উচ্চ ক্ষমতা ও দাপনের হবে এমন হালকা, বহুমুখী ও আধুনিক এক যুদ্ধবিমান তৈরি করা।

রাশিয়ার কিছু প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি ফাইটারটির নকশায় এফ-১৬-এর মতো কিছু দিকও রয়েছে। প্রায় দুই দশক গবেষণা ও উন্নয়নের পর ২০০৫ সালে জে-১০ আনুষ্ঠানিকভাবে চীনা বিমানবাহিনীতে যুক্ত হয়। আজও এটি চীনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সব মিলিয়ে, চীনা জে-১০ সি যুদ্ধবিমান ইরানের হাতে পৌঁছানো শুধু তেহরানের সামরিক ক্ষমতা নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে শক্তির ভারসাম্যকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে পারে।