Image description
 

তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে সিরিয়া। আর এজন্য দামেস্ক এখন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দিতে চাইছে। সিরিয়ার এই কৌশলী অবস্থানের মূলে রয়েছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল শারা। তিনি মূলত দামেস্কের ওপর থেকে আঙ্কারার প্রভাব কমিয়ে আনতে চাইছেন।

ইসরায়েলি দৈনিক মাআরিভ-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের মোশে দায়ান সেন্টারের বিশ্লেষক ড. হাই এইতান কোহেন ইয়ানারোচাক বলেন, এই উদ্যোগ কোনো আদর্শিক কারণে নয়, বরং তুরস্কের প্রভাব কমিয়ে সিরিয়ার কৌশলগত স্বাধীনতা অর্জনের কৌশল মাত্র।

তুরস্ককে পাশ কাটিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা

 

ড. ইয়ানারোচাক বলেন, ‘শারা আদর্শিক কারণে নয়, বরং তুরস্কের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কিছুটা কৌশলগত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘শারা কোনোভাবেই জায়নবাদী নন, বরং এই পদক্ষেপ তাকে তুরস্কের চাপ থেকে বের হওয়ার একটা সুযোগ দিচ্ছে।’

 
 

তিনি জানান, শারা চান না তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করতে। বরং তিনি চান একটি ভারসাম্য রক্ষা করে নিজের সরকারের ওপর তুরস্কের নির্ভরতা কমাতে। এ কারণেই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পথে হাঁটছেন তিনি।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার এই সম্ভাব্য কূটনৈতিক পরিবর্তন আংকারাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। একসময় তুরস্কের কড়া প্রভাবাধীন একটি দেশ এখন যদি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেয়, তবে আঞ্চলিক রাজনীতিতে এটি তুরস্কের জন্য বড় ধাক্কা হবে।

ইয়ানারোচাক বলেন, তুরস্কের প্রভাব কেবল কথার কথা নয়। আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে সরকারি সফর করে তুর্কি গোয়েন্দা সংস্থা। তিনি জানান, উত্তর সিরিয়া এখনো কার্যত তুরস্কের দখলে রয়েছে। যেখানে তারা অবকাঠামো, পরিবহন ও বিমানবন্দর উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন, সিরিয়ার মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য তুরস্কে পড়াশোনা করেছেন, কেউ কেউ তুর্কি নাগরিকও, এবং প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে তুরস্কের সঙ্গে যুক্ত।

ইরান দুর্বল হলে লাভবান হয় তুরস্ক

মধ্যপ্রাচ্যের নতুন ভূরাজনীতিতেও তুরস্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে। ইয়ানারোচাক বলেন, ‘ইরান ও তুরস্ক ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তুর্কিরা মুখে স্বীকার না করলেও, সিরিয়ায় আসাদের পতন ও সাম্প্রতিক যুদ্ধের ফলে ইরানের পরাজয় থেকে তারা উপকৃত হয়েছে।’

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে এখন মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান দুই আঞ্চলিক শক্তি হলো ইসরায়েল ও তুরস্ক। এমন বাস্তবতায় সিরিয়া হয়ে উঠেছে একটি কেন্দ্রবিন্দু—যেখানে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত স্পষ্ট।

চুক্তি আটকাতে তুরস্কের সক্রিয় ভূমিকা

তুরস্ক চায় না সিরিয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করুক। ইয়ানারোচাক বলেন, আমি নিশ্চিত তুরস্ক সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যাতে সিরিয়া আব্রাহাম চুক্তিতে সই না করে।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, তুরস্ক চায় সিরিয়া ও কাতার তাদের পাশে থাকুক এবং ইসরায়েলকে একঘরে করা যাক। এরদোয়ান যখন ইসরায়েলের বৈধতা হরণে সচেষ্ট, তখন সিরিয়া-ইসরায়েল কোনো সমঝোতা তুরস্কের কৌশলকেই বিপর্যস্ত করবে।

সূত্র : টাইমস অব ইসরায়েল