Image description

২০২৫ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য বড় রাজনৈতিক ও আইনি জয়। আদালত ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রায় দিয়ে বলেছে, বিচারাধীন অবস্থায় নীতিমালার উপর জাতীয়ভাবে অবরোধ আরোপ করা যাবে না। ফলে ভবিষ্যতে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে আরও জটিল আইনি ধাপ পার হতে হবে।

এই মামলাটি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল সংক্রান্ত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ঘিরে ছিল। যদিও আদালত এই আদেশ বৈধ কি না তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করেনি, তবে আদেশটি তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ার আদালতের ক্ষমতা সীমিত করেছে। এতে ভবিষ্যতের জন্য একটি দিকনির্দেশনা তৈরি হলে প্রেসিডেন্টের নীতির উপর তাত্ক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা কঠিন হবে।

রায়ের পর হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প বলেন, "এটি একটি আশ্চর্যজনক সিদ্ধান্ত, আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।" তিনি এই রায়কে গণতন্ত্রের পক্ষে "বড় জয়" বলে উল্লেখ করেন। এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আদালতের হস্তক্ষেপ হ্রাস করতে সহায়তা করবে।

২০২৪ সালে আদালত ট্রাম্পকে অফিসে থাকা অবস্থায় করা কাজের জন্য ফৌজদারি বিচারের হাত থেকে প্রাথমিকভাবে সুরক্ষা দেয়। সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় এবারের রায়কেও দেখা হচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে ট্রাম্প আদালতে একের পর এক মামলায় জয় পেয়ে চলেছেন।

লিবারেল তিন বিচারপতি—সোনিয়া সোটোমায়র, এলেনা কাগান ও কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন—এই রায়ের বিরোধিতা করেন। বিচারপতি সোটোমায়র বলেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যত সংবিধানকে পাশ কাটানোর পথ তৈরি করে। তিনি আদালতের সিদ্ধান্তকে “সরকারের অসাংবিধানিক নীতি কার্যকর করার সুযোগ” হিসেবে আখ্যা দেন। বিচারপতি জ্যাকসন আরও কঠোর ভাষায় বলেন, "নির্বাহী ক্ষমতা এখন থেকে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে।"

যদিও জাতীয় পর্যায়ে নীতির বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক স্থগিতাদেশ জারি করা কঠিন হয়ে পড়বে, আদালত ক্লাস অ্যাকশন মামলার পথ খুলে রেখেছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে একটি বড় গোষ্ঠী মামলা করতে পারে। যেমন, গর্ভবতী নারীদের একটি দল ইতিমধ্যেই মেরিল্যান্ডে এই ধরনের একটি মামলা দায়ের করেছে। তারা আদালতের কাছে দাবী জানিয়েছে, যাতে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির পর জন্মগ্রহণকারী সন্তানদের ট্রাম্পের আদেশ থেকে রক্ষা করা যায়।

এছাড়া, অ্যামেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (ACLU) একাধিক নতুন ক্লাস অ্যাকশন মামলা দায়ের করেছে। সংগঠনটি বলেছে, এই ধরনের মামলা করেই ট্রাম্পের আদেশ বন্ধ করা সম্ভব হবে।

প্রায় দুই ডজন ডেমোক্রেটিক শাসিত রাজ্য ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল নীতির বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিল। তারা যুক্তি দেয়, একজন গর্ভবতী নারী এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে চলে গিয়ে সন্তানের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে পারেন—এ কারণে নীতি বাতিল করা প্রয়োজন।

বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট বলেন, যদি ক্ষতিগ্রস্তদের পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে হয়, তবে জাতীয় স্থগিতাদেশ এখনো ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই রাজ্যগুলো নিম্ন আদালতে আবারও জাতীয়ভাবে আদেশ স্থগিত করার আবেদন করতে পারে।

মামলাটি হয়তো ভবিষ্যতে আবার সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যাবে। ট্রাম্পের পক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি বলেন, অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্টে এই আদেশের বৈধতা নিয়ে চূড়ান্ত শুনানি হতে পারে। যদিও এই সময়সীমা নির্ধারিত নয়, তবে বিষয়টি আবার উচ্চ আদালতে আসার সম্ভাবনা প্রবল।

সূত্র: সিএনএন