Image description

নিউ ইয়র্ক শহরের ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে বড় জয় পেয়েছেন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ জোহরান মামদানি। তার এই বিজয় শুধু স্থানীয় রাজনীতির এক মাইলফলক নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী রাজনীতির জন্য এক বড় সাফল্য বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মেয়র প্রার্থী মামদানি নিউ ইয়র্ককে বদলে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু সাহসী পরিকল্পনা দিয়েছেন— যেমন, সরকারি মালিকানাধীন গ্রোসারি দোকান চালু, আরও ঘর নির্মাণ, বাস ভাড়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা এবং ভর্তুকিপ্রাপ্ত ভাড়াটিয়াদের জন্য ভাড়া স্থির রাখা। তবে ভোটের আগে তার এসব পরিকল্পনার চেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ফিলিস্তিন-ইসরায়েল প্রসঙ্গে তার অবস্থান।

মামদানি শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের অধিকার সমর্থন করে এসেছেন। তিনি গাজার ওপর ইসরায়েলের হামলাকে "গণহত্যা" বলে আখ্যায়িত করেন, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মূল্যায়নের সাথেও সঙ্গতিপূর্ণ।

তার এই স্পষ্ট অবস্থানের কারণে সমালোচনার মুখে পড়লেও, তিনি পিছু হটেননি। বরং দৃঢ় অবস্থান নিয়েই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোর মতো প্রভাবশালী প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে দেন। ভোটের ফল এখনো চূড়ান্ত না হলেও, প্রায় সব ভোট গণনা শেষে মামদানি কুয়োমোর চেয়ে সাত পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।

নিউ ইয়র্ক মূলত ডেমোক্র্যাটিক প্রভাবসম্পন্ন শহর। তাই একবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত হলে, সাধারণ নির্বাচনে জেতা অনেকটাই সহজ। সেই হিসেবে মামদানির নভেম্বরে মেয়র হওয়া প্রায় নিশ্চিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

৩৩ বছর বয়সী মামদানি একজন রাজ্য আইনপ্রণেতা। তিনি উগান্ডায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তার পিতামাতার শিকড় ভারতীয়। ২০২১ সাল থেকে তিনি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য।

তার নির্বাচনী প্রচারণা ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দারুণভাবে সক্রিয়, সরাসরি জনগণের সাথে কথা বলে তাদের মন জয় করেছেন। হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক তার পক্ষে দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচার করেছেন।

নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক হেবা গোয়ায়েদ বলেন, “তিনি যেভাবে ফিলিস্তিন প্রশ্নে পিছু না হটে অবস্থান ধরে রেখেছেন, তা তরুণদের আকৃষ্ট করেছে। যদি তিনি সমঝোতার পথে যেতেন, তাহলে এই জয় সম্ভব হতো না।”

অন্যদিকে, কুয়োমো তার প্রচারণায় ইসরায়েলপন্থী অবস্থানকেই মূল বিষয় করে তুলেছিলেন। তিনি দাবি করেন, ফিলিস্তিনপন্থী বক্তব্য antisemitism বা ইহুদি-বিরোধিতাকে উসকে দেয়। তিনি মামদানির বক্তব্যকে ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেছিলেন, “গণহত্যা”, “যুদ্ধাপরাধী” এসব শব্দ ব্যবহারে ঘৃণা ছড়ায়।

কুয়োমো ছিলেন দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা একজন নেতা। তিনি নিজে এবং তার বাবা উভয়েই নিউ ইয়র্কের গভর্নর ছিলেন। তার পক্ষে বিল ক্লিনটন ও কংগ্রেসম্যান জিম ক্লাইবার্নের মতো জাতীয় ডেমোক্র্যাট নেতারা সমর্থন দিয়েছিলেন।

তবুও, মামদানি জয় পেয়েছেন মূলত জনগণের শক্তিতে। তাকে সমর্থন দিয়েছে ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্টস অব আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শাখা এবং অন্যান্য প্রগতিশীল গোষ্ঠী।

“এটি একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত,” বলেন প্রগতিশীল সংগঠন জাস্টিস ডেমোক্র্যাটসের মুখপাত্র উসামা আন্দরাবি। “যারা বর্ণবাদ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান নেয়, এই বিজয় তাদের জন্য অনুপ্রেরণা।”

নির্বাচনী প্রচারণায় মামদানির ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান অনেক ভোটার, বিশেষ করে মুসলিম ও প্রগতিশীল ইহুদি তরুণদের উদ্দীপ্ত করেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পক্ষে কাজ করা কুয়োমোর পক্ষে বিলিয়নিয়ার বিল অ্যাকম্যান ও মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সুপার প্যাক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ এসেছে। কিন্তু তারাও মামদানির গণভিত্তিকে হারাতে পারেননি।

জিউয়িশ ভয়েস ফর পিস (Jewish Voice for Peace) অ্যাকশনের রাজনৈতিক পরিচালক বেথ মিলার বলেন, “মামদানির অবস্থান তাকে দুর্বল করেনি, বরং আরও শক্তিশালী করেছে। এটি দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ইসরায়েলের নিপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি হচ্ছে।”

শেষ পর্যন্ত মামদানির এই বিজয় শুধু নিউ ইয়র্ক শহরের জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রগতিশীল ও মানবিক রাজনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল।

সূত্র: আল জাজিরা