Image description
গতকাল সোমবার (২৪ জুন) রাতে কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এর আগে সোমবার সকালে এ হামলার বিষয়ে আলোচনা করতে জরুরি বৈঠক করে ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল। তার দুই দিন আগে গত শনিবার ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তেমন কোনো উস্কানি কিংবা সতর্কতা ছাড়াই গত ১৩ জুন ভোররাতে ইরানের ওপর হামলা শুরু করে ইসরাইল। এতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ বেশ কয়েকজন জেনারেল এবং পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। দখলদার ইসরাইলের এমন উস্কানির জবাবে ইরানও দেশটিতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
 

যুদ্ধ পরিকল্পনার সাথে সংশ্লিষ্ট চারজন ইরানি কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তারা বলেন, হামলাগুলো যেন নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত আকারে হয় সে নির্দেশও দিয়েছিলেন খামেনি। যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে বসলো ট্রাম্প সরকার। যার জবাবে ইরাক ও কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় তেহরান।

ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরআইজিসি) কাতারে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত আল উদেইদ বিমান ঘাঁটিকে হামলার জন্য বেছে নেয় দুটি কারণে। আইআরজিসির দুই সদস্যের মতে, যেহেতু এটি এই অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক ঘাঁটি, তাদের ধারণা ছিলো যে এই ঘাঁটিটি গত শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় সমন্বয় করেছিল।


 

তবে যেহেতু এটি ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারে অবস্থিত, তাই ইরানি কর্মকর্তারা চেষ্টা করেছিলেন ক্ষয়ক্ষতি যতটা কম রাখা যায়।

এজন্যই হামলার কয়েক ঘন্টা আগে, ইরান মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে আগাম বার্তা পাঠায় যে হামলা আসন্ন। কাতার তার আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করা হয়।

মার্কিন স্থাপনায় হামলা করে ইরান নিজ দেশের জনসাধারণের পাশাপাশি সারা বিশ্বকে বার্তা দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিশোধ নিয়েছে।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা আমাদের শত্রুদের সতর্ক করে দিচ্ছি, আঘাত করে পার পাওয়ার দিন শেষ হয়ে গেছে।’

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে কাতারের আকাশে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আলোর ফুটেজের পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান বাজানো হয়। টেলিভিশন উপস্থাপকরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে ইরানের গৌরব এবং বিজয়ের কথা নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করেন।

কিন্তু পর্দার আড়ালে, চার ইরানি কর্মকর্তা বলেছেন, ইরানের নেতারা আশা করেছিলেন যে, তাদের সীমিত আক্রমণ এবং আগাম সতর্কতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নতুন করে হামলা থেকে বিরত রাখবে, যার ফলে ইরানও একই কাজ করতে পারবে। সেইসাথে ইসরাইলকেও যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিতে পারবে।

পরিকল্পনাটি কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগেই সতর্ক করায় ইরানকে ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। বলেন, আগে সতর্ক করায় প্রাণহানিী এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

এর কিছুক্ষণ পরেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে, উভয় দেশই নিশ্চিত করে যে তারা একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানি পরিচালক আলী ভায়েজ বলেছেন, বৃহত্তর সংঘাত এড়িয়ে সব পক্ষের কাছেই এখন জয় দাবি করার মতো সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বলতে পারে যে, তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পিছিয়ে দিয়েছে। আর ইসরাইল দাবি করতে পারে যে, তারা আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ ইরানকে দুর্বল করে দিয়েছে। তবে ইরান বলতে পারে, তারা অনেক শক্তিশালী সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করে দৃঢ়ভাবে টিকে আছে।’

বেশিরভাগ ইরানি নিজ দেশের পতাকা তলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাইরে থেকে যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়ার নিন্দা জানিয়েছে।

সামরিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমান না হলেও ঠিকই সমানতালে লড়াই চালিয়ে গেছে দৃঢ়প্রত্যয়ী ইরান।

তবে ইরানের আইআরজিসির সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক বিশ্লেষক করিম জাফারি সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে যুদ্ধে না জড়ানোর আহ্বান জানান।

ইরান এখন কী পদক্ষেপ নেবে সেটা একটা প্রশ্ন। যদিও মার্কিন ঘাঁটিতে সীমিত আকারের হামলা, বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে পরিকল্পিত বলেই মনে হচ্ছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে, বৈরিতার সমাপ্তি ঘটেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তুরস্ক, রাশিয়া এবং তুর্কমেনিস্তান সফরে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর, আরাগচি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার দেশে হামলা চালিয়ে লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে আগ্রাসনকারীরা।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বলছি না যে, তারা ক্ষতি করেনি, হ্যাঁ, ক্ষতি হয়েছে। তবে তারা তাদের মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।’

জাতিসংঘে নিউইয়র্ক টাইমসের ব্যুরো চিফ ফারনাজ ফাসিহির প্রবন্ধ। অনুবাদ করেছেন রুবিনা আক্তার।