Image description

ইরানে মার্কিন বিমান হামলার একদিন পর, ইরানের পক্ষ থেকে হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনার ইঙ্গিত আসায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হতে দেবে না, তবে দেশটিতে সরকার পরিবর্তনের কোনও উদ্দেশ্য নেই এবং তারা বড় পরিসরের যুদ্ধে জড়াতে চায় না।

রবিবার সকালে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ সাংবাদিকদের বলেন, "এখন শান্তির সময়। আমরা ইরানে শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে নই।" একইসঙ্গে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স সাফ জানিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে, ইরানের জনগণের বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।

তবে আগামী দিনে কী হবে, সেটি এখন মূল প্রশ্ন। ইরান কি উত্তেজনা প্রশমনে যাবে, নাকি পাল্টা প্রতিক্রিয়ার পথে হাঁটবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে।

এর মধ্যেই ইরানি টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, দেশটির পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালী বন্ধের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। ইরান ও ওমানের মধ্যবর্তী এই প্রণালীটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন রুট, যার ওপর নির্ভর করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতি। এটি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।

তবে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নির্ভর করছে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওপর। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রণালী বন্ধের ঘোষণা আসেনি।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়—নাটানজ, এসফাহান ও ফোর্দো। বিশেষ করে ফোর্দোর পার্বত্য স্থাপনায় ছোড়া হয় ছয়টি শক্তিশালী ‘বাংকার বাস্টার’ বোমা। বাকি দুটি কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয় দুই ডজনের বেশি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র।

মার্কিন প্রশাসনের দাবি, এই হামলা ছিল সফল ও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখনো পরিষ্কার নয়, এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কতটা পিছিয়ে পড়েছে বা অবকাঠামোর কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।

শনিবার রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি এই হামলার ঘোষণা দেন এবং রবিবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ইরানের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে আরও হামলার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ফলে এখন আন্তর্জাতিক মহলের চোখ ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত ও যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে। এই মুহূর্তে দুই দেশই দাবি করছে তারা শান্তির পক্ষে, কিন্তু ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বলছে, পরিস্থিতি আরও বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে যেকোনো মুহূর্তে।