Image description

যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের বড় অংশই এখন দলের নেতৃত্বে নতুন মুখ দেখতে চায় বলে রয়টার্স/ইপসোসের এক জরিপে উঠে এসেছে।

এখনকার ডেমোক্র্যাট নেতৃত্ব দৈনন্দিন সমস্যা ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে গুরুত্ব না দিয়ে রূপান্তরকামীদের অধিকার ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো কিছু বিষয় নিয়ে বেশি উচ্চকিত, বলছেন জরিপে অংশ নেওয়া দলটির বেশিরভাগ সমর্থক।

গত ১১ থেকে ১৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হওয়া এ জরিপে চার হাজার ২৫৮ জন অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে এক হাজার ২৯৩ জন নিজেদের ডেমোক্র্যাট বলে পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৬২ শতাংশ ডেমোক্র্যাটই দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন দরকার বলে মত দিয়েছেন। বিপক্ষে বলেছেন ২৪ শতাংশ। বাকিরা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি বা উত্তর দেননি।

জরিপে নেতৃত্বে পরিবর্তন চান এমন রিপাবলিক সমর্থক পাওয়া গেছে ৩০ শতাংশ।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের পর থেকে ডেমোক্র্যাট শিবিরে নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের বেশিরভাগই বলছেন, তাদের নেতারা যেন দৈনন্দিন সমস্যা, সাধারণ মানুষের কর কমানো, ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর কথা বেশি বেশি বলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজমও ব্যাপারটা স্বীকার করেছেন।

“মানুষ আমাদের বিশ্বাস করে না, তারা ভাবে আমরা তাদের ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে ভাবি না,” বলেছেন তিনি।

নিউজম ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নামতে পারেন বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

ওই নির্বাচনের প্রার্থী ঠিক করার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদেরকে এখন আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসের কোনো কক্ষেই ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য নেই। সেজন্য দলটি নতুন নেতা খুঁজছেও।

এদিকে নেতৃত্ব নিয়ে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে টানাপড়েনও প্রকাশ্যে আসছে। প্রগতিশীল অ্যাক্টিভিস্ট ডেভিড হগকে ডেমোক্র্যাট ন্যাশনাল কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সম্প্রতি শিক্ষকদের প্রভাবশালী সংগঠন আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্সের প্রেসিডেন্ট র‍্যান্ডি ওয়েইনগার্টেনও পদত্যাগ করেছেন।

রয়টার্স/ইপসোসের জরিপের ফল পর্যালোচনা করা ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভোটাররা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।

“ভোটাররা এখন খুবই অধৈর্য। তারা চান নেতারা জীবনযাত্রার ব্যয়, স্বল্পআয়ের মানুষের কষ্ট এবং দৈনন্দিন সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুক,” বলেছেন ডেমোক্র্যাট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফিউচার মেজরিটির প্রধান মার্ক রিডল।

জরিপে দেখা গেছে, সাধারণ ভোটাররা কম খরচে শিশুসেবা, ওষুধের দাম কমানো, স্বাস্থ্যবীমা সহজলভ্য করা এবং গণপরিবহনকে অগ্রাধিকার দিতে চান। কিন্তু এসব ইস্যুতে ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বের আগ্রহ কম।

অর্থনৈতিক নীতিতেও দলটির নেতৃত্বের সঙ্গে তরুণ ভোটারদের দ্বিমত যে প্রকট হয়েছে তাও দেখা যাচ্ছে সর্বশেষ এ জরিপে।

“শুধু ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করে ভোটারদের আস্থা পাওয়া যাবে না। অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক কল্যাণের প্রশ্নে আমাদের নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে,” বলেছেন নিজেকে ডেমোক্র্যাট সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেওয়া বাল্টিমোরের ভোটার অ্যান্টনি রেন্টশ।

রূপান্তরকামীদের অধিকারকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া নিয়েও অনেক সমর্থকই ‘বিরক্ত’।

“রূপান্তরকামীদের অধিকার গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটা সহজেই বিভাজন তৈরি করে। এমন ইস্যু দরকার, যা মানুষের জীবনে বাস্তব প্রভাব ফেলবে,” বলেছেন টেক্সাসের অস্টিনে বসবাসকারী রূপান্তরকামী বেঞ্জামিন ভিলাগোমেজ।

ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের কর ও বাণিজ্য নীতি মূল্যস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি বাড়ালে, সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে নেতৃত্বকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

“জরিপ বলছে, ট্রাম্পের অর্থনীতি নিয়ে আরও কড়া অবস্থান নিতে হবে ডেমোক্র্যাটদের এবং দেখাতে হবে যে, আমরাই সাধারণ মানুষের পক্ষে,” বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্সের হয়ে কাজ করা বিশ্লেষক বেন টালচিন।

ভোটাররা যেন ডেমোক্র্যাটদের ‘দুই শয়তানের মধ্যে তুলনামূলক কম খারাপ’ এমন না বিবেচনা করে নতুনভাবে দেখে, তার জন্য কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন মিনিয়াপোলিসের ২৯ বছর বয়সী ভোটার স্যাম বোল্যান্ড।

“ডেমোক্র্যাটদের এমন একটা দলে পরিণত হওয়া দরকার যেটি প্রতিদিন দল নিয়ে মানুষকে উদ্দীপ্ত করবে। এর জন্য দরকার নেতৃত্বে পরিবর্তন,” বলেছেন তিনি।