
অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিই চাইছে যে, ইসলামিক রিপাবলিক দুর্বল হোক ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়ুক। কারণ হচ্ছে—ইরানকে দুর্বল ও অরক্ষিত রাখা গেলে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বজায় রাখা ও নিরাপত্তার অজুহাতে অনুচিত পদক্ষেপ নেওয়া অনেক সহজ হয়।
ইরানের বিভক্ত বিরোধী দলগুলো মনে করে, আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির শাসন শেষ করতে তাদের মুহূর্তটি হয়তো খুব কাছেই। কিন্তু আগের বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত কর্মীরা এখনই রাস্তায় নামতে চাচ্ছেন না। তারা বলছেন, খামেনির শাসনব্যবস্থা তারা ঘৃণা করেন। তবুও তারা এমন একটি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণ-অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক নন। কারণ, তাদের জাতি আক্রমণের মুখে। এ হামলা বন্ধ হলেই খামেনিকে জবাবদিহির মুখোমুখি করতে রাস্তায় নামবেন তারা।
ইসলামী প্রজাতন্ত্রের নির্বাসিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা নিজেরাই বিভক্ত। কেউ কেউ বিক্ষোভের আহ্বানও জানাচ্ছেন। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কুর্দি ও বেলুচি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো জেগে উঠতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র প্রায় যে কোনো সময়ের তুলনায় দুর্বল দেখালেও এর ৪৬ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে যে কোনো সরাসরি চ্যালেঞ্জের জন্য সম্ভবত এক ধরনের জন-অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হবে।
এ ধরনের বিদ্রোহ অদূর নাকি আসন্ন- তা বিতর্কের বিষয়। প্রয়াত শাহের পুত্র রেজা পাহলভি এই সপ্তাহে মিডিয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে চান। চার দশকের মধ্যে ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে উৎখাতের এটিই সেরা সুযোগ বলে ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন, এটি আমাদের মুহূর্ত।
তিনি বলছেন, ‘আলী খামেনি ও ইসলামী প্রজাতন্ত্রই এই অস্থিরতা ও যুদ্ধের কারণ।’ তার দাবি, এটা ‘ইরান ও তার জনগণের লড়াই নয়, এটা হচ্ছে খামেনি ও ইসলামী সরকারের লড়াই।’
রেজা পাহলাভিতে সমর্থন রয়েছে ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের। কারণ তিনি বলেছেন, ইসলামিক রিপাবলিককে উৎখাত করাই সমাধান, যা অনেকটাই অমেরিকা ও ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিলে যায়। তিনি রাজপথের আন্দোলন ও ধর্মঘট সমর্থন করেন, যা অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়াতে পারে ও অভ্যুত্থানে সহায়ক হতে পারে।
ইসরায়েলের জন্য শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনা অবশ্যই একটি যুদ্ধ-লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানিদের উদ্দেশে বলেন, আমরা তোমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথও পরিষ্কার করছি।
বাসিজ মিলিশিয়ার সদস্য মোহাম্মদ আমিন প্রায়ই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মোতায়েন থাকেন। তিনি বলেন, কোমে তার ইউনিটকে ইসরায়েলি গুপ্তচরদের নির্মূল এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ইরান ছেড়ে যাওয়ার আগে ছয় বছর কারাগারে কাটিয়েছেন এমন একজন বিশিষ্ট বিরোধী কর্মী আতেনা দায়েমি বলেন, মানুষ কীভাবে রাস্তায় নেমে আসবে? এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে লোকেরা কেবল নিজেদের, তাদের পরিবার, তাদের স্বদেশিদের এবং এমনকি তাদের পোষা প্রাণীদের বাঁচানোর দিকেই মনোনিবেশ করছে।
ইরানের সবচেয়ে আলোচিত মানবাধিকারকর্মী ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নার্গেস মোহাম্মদীও একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তেহরানের কিছু অংশ খালি করার ইসরায়েলি ঘোষণার জবাবে তিনি পোস্ট করে বলেছেন, ‘আমার শহর ধ্বংস করো না।’
দুই বছর আগে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়া লাখ লাখ মানুষের মধ্যে ইরানে রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা আরও দুই কর্মী বলেছেন, তাদেরও এখনো বিক্ষোভ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
ইরানি কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিরাজের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেছেন, ‘ইসরায়েলি হামলা শেষ হওয়ার পরে আমরা আমাদের আওয়াজ তুলব। কারণ, এই সরকার যুদ্ধের জন্য দায়ী।