
ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধের কারণে প্রচণ্ড অস্থিতিশীল সময় পার করছে মধ্যপ্রাচ্য। এর প্রভাবে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০ ডলার বাড়তে পারে বলে পূূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান সাকস। ইরানের তেল সরবারহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে প্রতি ব্যারেলের দাম পৌঁছতে পারে ৯০ ডলারে।
গোল্ডম্যানের বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ইয়েমেনি হুতিদের হামলায় বাব এল-মান্দেব প্রণালি দিয়ে তেলপ্রবাহ ব্যাহত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্কলেস ব্যাংক জানিয়েছে, যুদ্ধ আরো তীব্র হলে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ১০০ ডলারের ওপরে উঠতে পারে।
এদিকে এক বছরের তুলনায় গত ১২ জুন থেকে ইরানের তেল রপ্তানির হার বেড়েছে গড়ে ৪৪ শতাংশ। ইরান দিনে রপ্তানি করেছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল তেল। এ তথ্য জানিয়েছে জাহাজ ট্র্যাকিং সাইট ট্যাংকারট্র্যাকার্স। এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সামির মাদানি জানিয়েছেন, যত বেশি সম্ভব তেল রপ্তানি করতে চাচ্ছে ইরান। নিরাপদভাবে তেল সরবরাহ করাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।
যুদ্ধ শুরুর পর হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকি দেয় ইরান। হরমুজ প্রণালি দিয়ে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ করা হয়। এই প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে তেলের দাম বাড়তে পারে। এতে এশিয়ার আমদানিকারকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। হরমুজ প্রণালি দিয়ে যাওয়া জ্বালানি তেলের প্রায় ৮২ শতাংশের গন্তব্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তেলবাহী ট্যাংকারের ভাড়া এরই মধ্যে বেড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহনের খরচ মাত্র তিন সেশনে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। পূর্ব আফ্রিকার ক্ষেত্রে পরিবহন খরচ বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি।
এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, ‘ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। চরম পরিস্থিতিতে ইরান জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা চালালে বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে।’ হরমুজ প্রাণালি দিয়ে তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, তেল ব্যবসায়ীরা এখন খেয়াল রাখবেন, আগামী দিনে সংঘাত কতটা তীব্র হয়। সিঙ্গাপুরের বেশ কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের তেল সরবরাহের ওপর প্রভাব ফেলবে কি না তা এখনই বলা কঠিন। কারণ ইরান কিভাবে প্রতিশোধ নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে কি না তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করবে। যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে পুরো অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামো ঝুঁকিতে পড়বে। সূত্র : ডেকান হেরাল্ড