Image description

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন করে ঝড় তুলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক চাঞ্চল্যকর ঘোষণায় তিনি ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বহিষ্কার কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এই কর্মসূচির আওতায় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান এবং নির্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে বলেন, “আমি ফেডারেল সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গণবহিষ্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে।” তিনি বিশেষভাবে লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো এবং নিউইয়র্ক শহরকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উল্লেখ করেন, যেগুলো অভিবাসন নীতিতে ‘Sanctuary City’ হিসেবে পরিচিত।

৬ জুন থেকে এসব শহরে শুরু হওয়া অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। “নো কিংস” ব্যানারে আয়োজিত এসব বিক্ষোভ দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিনে আয়োজিত সামরিক প্যারেড চলাকালীনও বিক্ষোভ হয়। এ সময় ইউটাহর সল্ট লেক সিটিতে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।

 

ট্রাম্প বলেন, “যারা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শান্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের আমাদের দেশে থাকার কোনো অধিকার নেই।” তিনি ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (DEA) এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “আমার নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে তোমাদের সঙ্গে। এখন যাও, কাজ শেষ করো!”

তবে এ নির্দেশের পরপরই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। মানবাধিকার সংগঠনগুলো একে ‘অমানবিক’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। বিভিন্ন সিটি প্রশাসন জানিয়েছে, তারা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংস অভিযান ঠেকাতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভাজন বাড়িয়ে দেওয়া এই ঘোষণা ট্রাম্পের পুরোনো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিরই অংশ, যার লক্ষ্য ‘অপরাধীদের সবচেয়ে বড় বহিষ্কার কর্মসূচি’ বাস্তবায়ন। ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময় এ নিয়ে ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও, এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। বহু মানুষ এই কর্মসূচিকে ‘রাষ্ট্রীয় দমননীতির প্রতীক’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।

এমন এক সময় এই ঘোষণা এলো, যখন অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে খামার, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে বলা হয়েছিল। তাই হঠাৎ করে বড় পরিসরে বহিষ্কারের ডাক অনেককেই চমকে দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধুমাত্র একটি আইন প্রয়োগের উদ্যোগ নয়, বরং ২০২৫ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ বিভাজন এবং জাতীয়তাবাদী আবেগকে উসকে দেওয়ার কৌশল হিসেবেও কাজ করতে পারে।

 

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্দেশ আবারও প্রমাণ করল, এই ইস্যু শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও নৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে।