Image description

গত মার্চ মাসে চীনের কেন্দ্রীয় শহর জিনইয়াং-এ একটি সেমিনারে তার চার সহকর্মীর সাথে অতিরিক্ত মদ্যপানের পর একজন চীনা সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যু হয়। তারা সরকারের নতুন নিয়মকানুন সম্পর্কে জানতে সেই সেমিনারে জড়ো হয়েছিলেন। উপস্থিত কর্মকর্তাদের  মিতব্যয়ী এবং বিচক্ষণ হতে বলা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে কর্মকর্তারা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন। একটি সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে কারণ মধ্যাহ্নভোজে উপস্থিত লোকজন চাননি যে তাদের সিনিয়ররা অবৈধ মদ্যপানের কথা জানুক। মৃত কর্মকর্তার পরিবারকে অর্থ প্রদান করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মদ্যপানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ শৃঙ্খলা সংস্থার সর্বশেষ অভিযানে এই ঘটনাটি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে দলের মধ্যে অসংযত এবং অনৈতিক আচরণের নিন্দা জানানো হয়েছে, কারণ প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দলের মধ্যে ব্যাপক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা পরিদর্শন কমিশন বলেছে, ‘পার্টি থেকে বারবার আদেশ জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও কিছু কর্মকর্তা কান বন্ধ করে রেখেছেন। তারা কোনো কিছুতেই ভয় পাচ্ছেন না।’

নতুন নিয়মগুলো কী কী
মে মাসে বেইজিং পার্টি এবং রাজ্য কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম জারি করে। বলা হয়েছে সরকারি বৈঠকে অ্যালকোহল এখন থেকে নিষিদ্ধ। ‘লাক্সারি’ ডিশ কিংবা সিগারেটও মিলবে না। এমনকী বৈঠকের জায়গাটি ফুলে সজ্জিত করা কিংবা জমকালো আয়োজন- কিছুই করা যাবে না। “thrift is glorious” বা ‘সাশ্রয় মহিমান্বিত’- এই নীতির উপরে ২০১৩ সালের এই সংক্রান্ত নির্দেশিকাকেই এবার আরও বদলে দেয়া হল। নয়া নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। অন্য দেশে সফরকালীন জুয়ো খেলাতেও অংশ নিতে পারবেন না সরকারি প্রতিনিধিরা।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চীনা রাজনীতির একজন ফেলো নীল থমাস ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, ‘মিতব্যয়িতা নীতি নিলেই বেইজিংয়ের আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান হয়ে যাবে না। কিন্তু এটি আমলাতন্ত্রের উপর শি’র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করে এবং দুর্নীতর বিরুদ্ধে তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন অনেক সাধারণ চীনা নাগরিক অর্থনৈতিক যন্ত্রণা অনুভব করছে।'

মিতব্যয়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবার নির্দেশ 
শি'র উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তিনি চান তার কর্মকর্তারা ‘মিতব্যয়ী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠুক’ এবং দুর্নীতিতে জড়িত সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এই নির্দেশের জেরে রেকর্ড সংখ্যক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে প্রায় ৩,১৩,০০০ ব্যক্তিকে ‘আট-দফা নিয়ম’ লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে। শি'র শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে, সরকারি কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা সম্পর্কে শি'র মন্তব্যের চারটি সংকলন এবং এক ডজনেরও বেশি দলীয় নিয়মকানুন ও নির্দেশিকা পড়তে হয়।

সূত্র : ফার্স্টপোস্ট