
ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাজ্য ও আরও চারটি দেশ মঙ্গলবার ইসরাইলের দুই কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রী—ইতামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বুধবার (১১ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে—এই চার দেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একযোগে এই দুই মন্ত্রীর সম্পদ জব্দ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বেন-গভির ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী এবং স্মোটরিচ অর্থমন্ত্রী, এবং দুজনই অধিকৃত পশ্চিম তীরের বসতি নির্মাতা।
এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করছে এবং এটি গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনওরকম তুলনার ভিত্তিকে প্রত্যাখ্যান করি: হামাস একটি সন্ত্রাসী সংগঠন… আমাদের মিত্রদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আসল শত্রু কে, তা ভুলে যাওয়া চলবে না।’ তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এবং বাকি চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বেন-গভির ও স্মোটরিচ ‘চরমপন্থি সহিংসতাকে উসকে দিয়েছেন এবং ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহায়তা করেছেন—এ ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’
বিষয়ে সরাসরি যুক্ত সূত্রগুলো জানায়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আর্থিক লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার এ পদক্ষেপকে ‘ঘৃণ্য’ বলে অভিহিত করেন এবং জানান, এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই ইসরায়েল সরকার বিশেষ বৈঠক করবে।
এদিকে, স্মোটরিচ পশ্চিম তীরের হেব্রন পাহাড়ে একটি নতুন ইহুদি বসতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, তিনি ব্রিটেনের পদক্ষেপকে ‘তুচ্ছ’ মনে করেন। তিনি ঘোষণা দেন, ‘আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এই নির্মাণ চালিয়ে যাব।’
এই পাঁচ দেশ যখন ইসরাইলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র একটি প্রধান ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে পাঁচটি দাতব্য সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যাদের বিরুদ্ধে হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।
‘নির্লজ্জ নীতি’
গত মাসে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন যেন গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। তারা সতর্ক করেন, যদি নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ না হয়, তাহলে কঠিন প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
এর ধারাবাহিকতায় লন্ডন ইসরাইলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করে এবং পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। যুক্তরাজ্য অভিযোগ করে, ইসরাইল ‘নির্লজ্জ’ নীতি অনুসরণ করছে।
জবাবে নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, পশ্চিমা দেশগুলো হামাসকে সাহায্য করতে চায় এবং ‘ইতিহাসের ভুল পাশে’ দাঁড়িয়েছে।
মঙ্গলবারের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হচ্ছে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা রোধ করা এবং কেবলমাত্র তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে যারা ‘ইসরাইলের নিরাপত্তাকেই ক্ষুণ্ণ করছে’। তবে গাজার পরিস্থিতি থেকে এটিকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যাবে না বলেও তারা উল্লেখ করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সাধারণ নাগরিকদের ওপর চলমান দুর্ভোগে স্তম্ভিত। প্রয়োজনীয় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেওয়া চলবে না। গাজা বা পশ্চিম তীর থেকে কোনও বেআইনি ফিলিস্তিনি স্থানান্তর গ্রহণযোগ্য নয়, গাজার ভৌগলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মতে, তারা এখনও ‘ইসরাইলের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, যা পারস্পরিক মূল্যবোধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।’
তারা বলেন, আমরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তি, মানবিক সহায়তার দ্রুত প্রবাহ এবং টেকসই দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব।
বেন-গভির ও স্মোটরিচ এর আগেও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছেন। তারা গাজা স্থায়ীভাবে দখল এবং ২০০৫ সালে পরিত্যক্ত ইহুদি বসতিগুলো পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন—যা নেতানিয়াহু প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস-নেতৃত্বাধীন এক হামলায় দক্ষিণ ইসরাইলে ১,২০০ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।
এর জবাবে ইসরাইল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যার ফলে গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী নিহত হয়েছেন ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি।