Image description


ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভেঙে গাজা উপত্যকার দিকে যাত্রা করা একটি দাতব্য জাহাজকে আটকাতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ওই জাহাজে রয়েছেন জলবায়ু আন্দোলনের বিশ্বখ্যাত মুখ গ্রেটা থুনবার্গ-সহ একদল মানবাধিকারকর্মী।

‘ম্যাডলিন’ নামের ব্রিটিশ পতাকাবাহী জাহাজটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) উদ্যোগে গত ৬ জুন ইতালির সিসিলি উপকূল থেকে রওনা দেয়। বর্তমানে এটি মিশরের উপকূলের কাছে অবস্থান করছে এবং ধীরে ধীরে গাজার দিকে এগোচ্ছে।

‘তোমাদের গাজায় যেতে দেওয়া হবে না’

রবিবার এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি যেন ম্যাডলিন গাজায় পৌঁছাতে না পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেটা ও তার হামাস-সমর্থক বন্ধুদের বলছি—তোমাদের ফিরে যাওয়া উচিত। গাজায় পৌঁছানো যাবে না।’

গ্রেটা থুনবার্গ জানিয়েছেন, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তিনি এই মিশনে অংশ নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে এবং মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনে দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এই যাত্রা।’

ইসরায়েল তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বললেও থুনবার্গ সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

২০১০ সালের রক্তক্ষয়ী ঘটনার ছায়া

ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ম্যাডলিন জাহাজটি গাজার উপকূলে পৌঁছানোর আগেই সেনাবাহিনী এটি আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাবে। এরপর নাবিক ও যাত্রীদের নির্বাসিত করা হবে।

২০১০ সালে এমনই এক উদ্যোগে, মাভি মারমারা নামে একটি তুর্কি জাহাজ গাজার উদ্দেশে রওনা দিলে ইসরায়েলি কমান্ডোদের অভিযানে ১০ জন নিহত হয়।

প্রতীকী মানবিক সহায়তা বহন করছে জাহাজটি

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) মতে, জাহাজটি চাল, শিশুখাদ্য ও ওষুধের মতো প্রতীকী সহায়তা নিয়ে যাচ্ছে। এটি বর্তমানে গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১৬০ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২৯৬ কিমি) দূরে। এফএফসির মুখপাত্র হাই শা উইয়া বলেন, ‘আমরা আটকানোর সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

জাহাজে গ্রেটা ছাড়াও রয়েছেন ইউরোপীয় সংসদের ফরাসি সদস্য রিমা হাসানসহ মোট ১২ জন যাত্রী ও ক্রু।

মানবিক সংকট চরমে, ইসরায়েল বলছে ‘নিরাপত্তা প্রয়োজন’

ইসরায়েল বলছে, গাজায় নৌ অবরোধ তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক। কারণ, এর মাধ্যমে হামাসের হাতে অস্ত্র পৌঁছানো রোধ করা যায়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধের জেরে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করছে গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ। গাজার ২৩ লাখ মানুষের বেশিরভাগই এখন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে, বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

গ্রেটা থুনবার্গ ও তাঁর সঙ্গীদের এই যাত্রা তাই শুধু প্রতীকী নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবতা ও রাজনৈতিক অবস্থানের প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, ইয়টটি গাজার উপকূলে পৌঁছাতে পারে কিনা, নাকি আবারও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে।