Image description


‘যুদ্ধ যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু সেনাবাহিনী বর্তমানে খুচরা যন্ত্রাংশের ভয়াবহ ঘাটতির মুখোমুখি।’


গাজায় দীর্ঘস্থায়ী এবং লাগাতার সামরিক অভিযানের ফলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী বর্তমানে লজিস্টিক ও কারিগরি সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। ইসরাইলি দৈনিক মারিভ শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান এবং অস্ত্রশস্ত্রে ক্রমবর্ধমান কারিগরি ত্রুটির কারণে সামরিক ইউনিটগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

মারিভ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের সৈন্য, কোম্পানি ও ব্যাটালিয়ন কমান্ডার এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, গাজায় মোতায়েন ইউনিটগুলোর সরঞ্জাম দ্রুত জীর্ণ হয়ে পড়ছে এবং খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব একটি বড় সঙ্কট হিসেবে দেখা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সপ্তম সাঁজোয়া ব্রিগেড বৃহস্পতিবার জানায়, ট্যাঙ্কের খুচরা যন্ত্রাংশ সুরক্ষিত করতে তারা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সেনাবাহিনীর মজুদ থেকে ইঞ্জিন, ট্র্যাক এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো ফুরিয়ে গেছে। অন্যদিকে অন্যান্য যন্ত্রাংশ একেবারেই অনুপলব্ধ।

একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন ব্রিগেড কর্মকর্তা মারিভকে বলেন, আমরা গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ায় প্রায় দুই বছর ধরে যুদ্ধের অবস্থায় আছি। এখন আবার গাজায়। যানবাহনগুলো দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে, এক মিশন শেষ না হতেই আরেকটিতে এগিয়ে যেতে হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এত দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। প্রতিটি যন্ত্রাংশের একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল থাকে এবং আমরা এখন সেই সীমায় পৌঁছে গেছি।’

মারিভ এর প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, এই সঙ্কট শুধুমাত্র ৭ম ব্রিগেডেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং সাঁজোয়া, কামান ও পদাতিক বিভাগসহ ইসরাইলের সব ধরনের নিয়মিত সেনা ইউনিট এই যান্ত্রিক দুরবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে।

একটি সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখ করে বলা হয়, গিভাতি ব্রিগেডের একটি ট্যাঙ্কে কামানের কারিগরি ত্রুটির ফলে গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। গাজার উত্তরে জাবালিয়া এলাকায় বন্দুকটি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। আগুন নেভাতে একটি দমকলের গাড়ি পাঠানো হয়।

‘আগুন নেভানোর পর দমকলের গাড়িকে এসকর্ট দেয়া কনভয় হামাস যোদ্ধাদের ইম্প্রোভাইজড বিস্ফোরক ডিভাইস হামলার শিকার হয়। এতে তিনজন ইসরাইলি সৈন্য নিহত এবং আরো দু’জন গুরুতর আহত হন।’

আরো এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, ‘যুদ্ধ যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ, প্রতিস্থাপন ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, কিন্তু সেনাবাহিনী বর্তমানে খুচরা যন্ত্রাংশের ভয়াবহ ঘাটতির মুখোমুখি।’

উল্লেখ্য, যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান বারবার প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইল ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ধারাবাহিক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, গণহত্যার রূপ ধারণ করেছে। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৫৪,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সহায়তা সংস্থাগুলো গাজার ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দার দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও (আইসিজে) ইসরাইল বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি