
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে একদিনেই ৩৪ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার খুইয়েছেন টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ারস ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, এটি মাস্কের জীবনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দৈনিক সম্পদ হারানোর ঘটনা।
মূলত টেসলা ও স্পেসএক্সের শেয়ার দর কমে যাওয়ায় তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩৪ বিলিয়ন ডলারে। তবে তিনি এখনো বিশ্বের শীর্ষ ধনী রয়েছেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশ কমেছে, যার ফলে ইলন মাস্কের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিটির বাজারমূল্য থেকে একদিনেই মুছে গেছে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তথ্য বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্টসেটের মতে, এটি টেসলার ইতিহাসে একদিনে বাজারমূল্যের সর্ববৃহৎ পতন। যা এখন পর্যন্ত যেকোনো কোম্পানির জন্য সবচেয়ে বড় একদিনের বাজারমূল্য হারানোর রেকর্ড।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মাস্ক-ট্রাম্প দ্বন্দ্ব এক ধরনের ‘অপরিহার্য সংঘর্ষ’ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যেখানে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির ইগো ও রাজনৈতিক অবস্থান মুখোমুখি হয়েছে।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ত্যাগ করার কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্পের প্রস্তাবিত করছাড় ও ব্যয় বিলের বিরোধিতা করেন মাস্ক। এর পর থেকেই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। ট্রাম্প ওভাল অফিস থেকে টেসলার সিইও ইলন মাস্কের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প ব্যবহার করেন নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল ও মাস্ক ব্যবহার করেন এক্স।
ট্রাম্প পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ইলন মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সরকারের সব ধরনের চুক্তি বাতিল করা হতে পারে। এতে করে টেসলা ও স্পেসএক্সের আয় বড় ধরনের ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
এই দ্বন্দ্বের সরাসরি প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দর পড়ে গেছে ১৪ শতাংশ, প্রতি শেয়ার মূল্য নেমে এসেছে ২৮৪ দশমিক ৭০ ডলারে।
এদিকে, মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে হুমকির সুরে লেখেন, ‘গো আহেড, মেক মাই ডে’। একই সঙ্গে তিনি জানান, স্পেসএক্স ধীরে ধীরে তাদের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযান কার্যক্রম বন্ধ করে দেবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ অভিযানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাস্ক বর্তমানে ৩৩৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হলেও তার এই অবস্থানও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। ব্লুমবার্গের তথ্য বলছে, তার সর্বোচ্চ সম্পদ ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার, যা ট্রাম্প বিজয়ের পরপরই রেকর্ড করেছিল।
ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ হওয়ার পর মাস্ক সরকারের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভারনমেন্ট ইফিশিয়েন্সি’ এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বে সেই সম্পর্ক একেবারে ভেঙে গেছে।
মাস্ক সম্প্রতি এক্স-এ জনমত জরিপ করে জানতে চান, ‘যুক্তরাষ্ট্রে কি এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা উচিত, যা প্রকৃতপক্ষে মাঝারি অবস্থানের (রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়া মানুষ) ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, মাস্কের অন্যান্য উদ্যোগ যেমন: নিউরালিংক ও তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক কোম্পানি এক্সএআই-ও এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে চাপে পড়তে পারে। কারণ এই খাতগুলোতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও অনুমোদন গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প-সমর্থিত বাজেট বিল, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির ট্যাক্স ক্রেডিট বাতিলের প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েই মূলত দ্বন্দ্বের সূচনা। জেপি মরগান চেজ-এর হিসেব অনুযায়ী, এতে টেসলার বার্ষিক মুনাফা থেকে প্রায় ১২০ কোটি ডলার কমে যেতে পারে।
বিশ্লেষকদের মত, দ্বন্দ্ব কেবল আর্থিক নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথেও প্রভাব ফেলতে পারে।