
সাম্প্রতিক পাক-ভারত সংঘাত প্রেক্ষাপটে ভারতের ‘অপপ্রচার’ এবং ‘আগ্রাসনমূলক কর্মকাণ্ড’ উন্মোচনে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে সক্রিয় হয়েছে পাকিস্তান।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর দুই দেশের মধ্যে চলমান বাকযুদ্ধ এবং অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগের মধ্যেই ইসলামাবাদ বিশ্বমঞ্চে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে জাতিসংঘে।
সোমবার (২ জুন) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের সামনে ভারতের কর্মকাণ্ডকে আঞ্চলিক শান্তির জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরে বিস্তারিত ব্রিফিং দেয় প্রতিনিধিদলটি।
পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদমাধ্যম ডনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ব্রিফিংয়ে পাকিস্তান দাবি করে যে, ভারত নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দিতে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচার ছড়াচ্ছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান ১০ নির্বাচিত সদস্য রাষ্ট্র- ডেনমার্ক, গ্রিস, পানামা, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, গায়ানা, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং স্লোভেনিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এতে পাকিস্তান তাদের ‘নীতি নির্ধারিত, দায়িত্বশীল ও কূটনৈতিক অবস্থান’ ব্যাখ্যা করে এবং ভারতের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘে আলোচনার জন্য গঠিত প্রতিনিধিদলে রয়েছেন পিপিপি চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার, খুররম দস্তগীর, সেনেটর শেরি রেহমান, মুসাদিক মালিক, ফয়সাল সাবজওয়ারি, বুশরা আনজুম বাট, জালিল আব্বাস জিলানি এবং তেহমিনা জানজুয়া। তারা ১ জুন নিউইয়র্কে পৌঁছান।
ব্রিফিংয়ে বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারি বলেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের দিকে অভিযোগ তুলে শহরাঞ্চলে হামলা ও সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা আঞ্চলিক শান্তির জন্য বড় হুমকি। প্রমাণ ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছাড়া এ ধরনের অভিযোগ আন্তর্জাতিক নিয়ম ভঙ্গ করে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনায় সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ করেছে, যা জাতিসংঘ সনদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শুধু সংঘাত-পরবর্তী নয়, বরং সংঘাত-পূর্ব প্রতিরোধমূলক উদ্যোগেও নজর দেওয়া উচিত।
প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তারা বলেন, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানে পানি সংকট সৃষ্টি করতে পারে, যা কৃষি, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। পাকিস্তানের কূটনৈতিক উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলেও উল্লেখ করা হয় বৈঠকে।
এর আগে প্রতিনিধিদল জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ফু কংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে ভারতের আগ্রাসনের বিষয়টি তুলে ধরেন। বিলাওয়াল চীনের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং বলেন, পাকিস্তান বরাবরই দায়িত্বশীল আচরণ করেছে।
প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, সাধারণ পরিষদের সভাপতি এবং নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। ওআইসি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে সম্মিলিত অধিবেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, আইনপ্রণেতা, থিঙ্কট্যাঙ্ক, বিশ্লেষক এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা হবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সৈয়দ তারিক ফতেমীর নেতৃত্বে আরও একটি প্রতিনিধিদল ২ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মস্কো সফর করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এই সফরের লক্ষ্যও একই- ভারতের সাম্প্রতিক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের অবস্থান তুলে ধরা।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান এখন এক বহুমাত্রিক কূটনৈতিক অভিযানে নেমেছে, যার মূল লক্ষ্য ভারতের অপপ্রচার মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের দায়িত্বশীল ও শান্তিপ্রবণ দেশ হিসেবে উপস্থাপন করা। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে উত্তেজনা প্রশমনে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর কী ভূমিকা থাকবে, তা সময়ই বলবে।