টানা ২৪ বছরের শাসনামলের পতন ঘটার মুহূর্তে দেশ ছেড়ে পালাবেন, এমন কথা কাউকে ঘুণাক্ষরে বুঝতে দেননি সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ। বিদ্রোহী যোদ্ধাদের রাজধানী দামেস্ক দখলের মুখে সিরিয়া ছেড়ে পালিয়ে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য সান চাঞ্চল্যকর এ তথ্য দিয়েছে।এক প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, সিরিয়ার সাবেক একনায়ক বাশার আল-আসাদকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও প্রতিবেদনটিতে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রের উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) মস্কোর এক নির্জন অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসরত আসাদ হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি চলতি বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে সিরিয়া থেকে পালিয়ে মস্কোতে আশ্রয় নেন। সেখানে তাঁকে নিরাপদে রাখা হয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই সুরক্ষার মধ্যেই এমন একটি ঘটনা ঘটল, যা বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।৫৯ বছর বয়সী আসাদ আচমকা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকদের ডেকে আনেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রাশিয়ার সাবেক এক শীর্ষ গুপ্তচর পরিচালিত টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্ট জেনারেল এসভিআর জানিয়েছে, আসাদ হঠাৎই ব্যাপক কাশতে শুরু করেন এবং শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকেন। অবস্থার অবনতি হতে থাকলে দ্রুতই তার অ্যাপার্টমেন্টেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
ঘটনার সূত্র ধরে জেনারেল এসভিআর আরও জানিয়েছে, ‘এটি নিছক একটি স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় নয়। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে হত্যার পরিকল্পনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’ আসাদের শরীরে বিষক্রিয়ার বিষয়টি মেডিকেল পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছে জেনারেল এসভিআর। তবে এই দাবির পেছনে সরাসরি কোনো উৎস বা সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। এই বিষয়টি পুরো ঘটনাকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।রুশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া বা নিশ্চিতকরণ বার্তা আসেনি। মস্কোর কূটনৈতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আসাদকে কে, কেন এবং কীভাবে লক্ষ্যবস্তু বানাল—তা নিয়ে বিতর্ক ক্রমেই গভীর হচ্ছে।
এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নাকি কোনো ব্যক্তিগত প্রতিশোধ লুকিয়ে আছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মনোযোগ এখন মস্কোর দিকে নিবদ্ধ। রাশিয়ার ভেতরেও প্রশ্ন উঠছে, সিরিয়ার সাবেক এই শাসকের জীবন যদি এমন অনিরাপদ হতে পারে, তবে এর পরিণাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে? বাশার আসাদের অবস্থা এখন স্থিতিশীল বলে জানা গেলেও পুরো ঘটনার রহস্য উন্মোচনের আগ পর্যন্ত এটি একটি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন অধ্যায় হয়েই রয়ে যাবে।
এর আগে, তুরস্কের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল—সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ চান স্ত্রী আসমা। শুধু তাই নয়, বিচ্ছেদের পর তিনি রাশিয়াও ছেড়ে যেতে চান। পরে বিষয়টি নাকচ করে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সংবাদ সম্মেলনে আসাদ পত্নীর বিবাহ বিচ্ছেদ আবেদনের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘না, এই তথ্য বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।’
বিডি প্রতিদিন