Image description
 

বিশ্বে অতিধনীদের তালিকায় আরব বিশ্বের ধনীদের উপস্থিতি উল্লেখজনকভাবে বেড়েছে। চলতি বছর ফোর্বস মিডল ইস্ট প্রকাশিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস রিচেস্ট আরবস’ তালিকায় মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের ৮টি দেশের ৩৮ জন আরব ধনকুবের স্থান পেয়েছেন। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার। ২০২৪ সালের তালিকায় মাত্র ২০ জন আরব ধনকুবের স্থান পেয়েছিলেন। আরব বিশ্বের অতিধনীদের কেউ রাজপুত্র, কেউ আবার সাধারণ ব্যবসায়ী। কেউ নিজে নিজে সম্পদ গড়েছেন, কেউ আবার উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পেয়েছেন। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী আরব বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল

প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল আল সৌদ
প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল আল সৌদছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

প্রিন্স আলওয়ালিদ বিন তালাল আল সৌদ একজন বিশিষ্ট সৌদি বিনিয়োগকারী। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৬৫০ কোটি ডলার। বিভিন্ন বড় কোম্পানিতে বড় বড় শেয়ার আছে তাঁর। আলওয়ালিদের কোম্পানি ‘কিংডম হোল্ডিং’-এর মাধ্যমে তিনি ফোর সিজন হোটেল চেইনসহ কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক। ২০২২ সালে সৌদি সরকারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ১৬০ কোটি ডলার মূল্যে তাঁর কাছ থেকে কিংডম হোল্ডিংয়ের প্রায় ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার কিনেছে।

ব্যক্তিগতভাবে ও কিংডম হোল্ডিংয়ের মাধ্যমে প্রিন্স আলওয়ালিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি এক্সএআইতে বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া সৌদি আরবে আলওয়ালিদের বেশ কিছু সম্পত্তি আছে। আরবি ভাষার চলচ্চিত্র ও সংগীত কোম্পানি রোটানার মালিক তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ন্যাপেও প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার ধরে রেখেছেন এই ব্যবসায়ী।

সুলাইমান আল হাবিব

সুলাইমান আল হাবিব সৌদি আরবের রিয়াদভিত্তিক সুলাইমান আল হাবিব মেডিকেল সার্ভিসেস গ্রুপের (এইচএমজি) প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৯০ কোটি ডলার। প্রশিক্ষিত শিশুবিশেষজ্ঞ আল হাবিব ১৯৯৫ সালে এই স্বাস্থ্যসেবা–সংক্রান্ত গ্রুপ গড়ে তোলেন। ২০২০ সালে তিনি এটিকে সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত করেন। সুলাইমান আল হাবিব প্রতিষ্ঠানটির ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক।

এইচএমজি গ্রুপটি সৌদি আরব, দুবাই ও বাহরাইনে একাধিক হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ফার্মেসি পরিচালনা করে। এ ছাড়া রয়েছে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসা, চর্মরোগ, প্লাস্টিক সার্জারি ও স্থূলতা নিরাময়ের জন্য বিশেষায়িত সেন্টার।

১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে সুলাইমান আল হাবিব রিয়াদের সিকিউরিটি ফোর্সেস হাসপাতালে শিশু বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

হুসেইন সাজওয়ানি

হুসেইন সাজওয়ানি
হুসেইন সাজওয়ানিছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

হুসেইন সাজওয়ানি দুবাইভিত্তিক বিলাসবহুল আবাসন কোম্পানি ডিএএমএসি প্রপার্টিজের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ২০ কোটি ডলার। ২০০২ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে তিনি খাবার সরবরাহ ব্যবসার মাধ্যমে মার্কিন সেনাবাহিনী ও নির্মাণ কোম্পানি ব্যাচেলের মতো প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিতেন।

২০০১ সালে দুবাইয়ে বিদেশিদের জন্য সম্পত্তি কেনার অনুমতি দেওয়ার পর তিনি আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র ছয় মাসে একটি আবাসিক ভবনের সব ইউনিট বিক্রি করতে সক্ষম হন। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ডিএএমএসি ৪৮ হাজারটির বেশি ইউনিট হস্তান্তর করেছে এবং ৫০ হাজারটির বেশি ইউনিট নির্মাণ করেছে। কোম্পানির প্রকল্প বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫টির বেশি দেশে রয়েছে।

সাজওয়ানি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৫ সালে তিনি ইডিজিএনইএক্স ডেটা সেন্টারস বাই ডিএএমএসি কোম্পানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে ডেটা সেন্টার নির্মাণে দুই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবেন। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এই বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার পরিকল্পনাও আছে তাঁর।

নাসেফ সাউয়িরিস

নাসেফ সাউয়িরিস
নাসেফ সাউয়িরিসছবি: এপি ফাইল ছবি

নাসেফ সাউয়িরিস একজন বিনিয়োগকারী এবং মিসরের অন্যতম ধনী পরিবারের সদস্য। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ৯৬০ কোটি ডলার। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিনি নিউইয়র্কভিত্তিক ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন স্পোর্টস কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলেন, যা এনবিএর নিউইয়র্ক নিক্স এবং এনএইচএলের রেঞ্জার্স দলের মালিক।

নাসেফ সাউয়িরিস বিশ্বের অন্যতম বড় নাইট্রোজেন সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওসিআই পরিচালনা করেন। ওসিআইয়ের কারখানার অবস্থান টেক্সাস ও আইওয়ায়। এটি ইউরোনেক্সট আমস্টারডাম এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত। তাঁর মালিকানাধীন আরেক কোম্পানি ওরাসকম কনস্ট্রাকশন একটি প্রকৌশল ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, যা কায়রো এক্সচেঞ্জ ও নাসডাক দুবাইয়ের তালিকাভুক্ত।

জার্মান স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি অ্যাডিডাসে নাসেফ সাউয়িরিসের প্রায় ৬ শতাংশ অংশীদারত্ব রয়েছে। তিনি ফোরট্রেস ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপের ওয়েস এডেনসের সঙ্গে যৌথভাবে প্রিমিয়ার লিগের অ্যাস্টন ভিলা ফুটবল ক্লাব কেনেন।

নাগিব সাউয়িরিস

নাগিব সাউয়িরিস
নাগিব সাউয়িরিসছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

নাগিব সাউয়িরিসও মিসরের সবচেয়ে ধনী পরিবারের উত্তরসূরি। তিনি তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা নাসেফ সাউয়িরিসের বড় ভাই। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ৫০০ কোটি ডলার। নাগিব টেলিকম খাতে বিনিয়োগ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। ২০১১ সালে রাশিয়ার ভিমপেলকম (বর্তমানে ভিয়ন) কোম্পানির কাছে ওরাসকম টেলিকম বিক্রি করেন নাগিব সাউয়িরিস। এ বেচাকেনায় কোটি কোটি ডলারের লেনদেন হয়েছে। তিনি ওরাসকম টিএমটি ইনভেস্টমেন্টসের চেয়ারম্যান।

মিসরের একটি সম্পদ পরিচালনা সংস্থা, ইতালির ইন্টারনেট কোম্পানি ইতালিয়ানোলাইনসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে টিএমটি ইনভেস্টমেন্টসের অংশীদারত্ব রয়েছে।

২০১২ সাল থেকে লা মানচা রিসোর্স ক্যাপিটালের মাধ্যমে সোনার খনি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন নাগিব সাউয়িরিস। ২০১৬ সালে তিনি ওরা ডেভেলপার্স নামের কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানিটি সাতটির বেশি দেশে আবাসন ব্যবসাসহ বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকে।

আবদুল্লাহ আল ফুতাইম ও পরিবার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল ফুতাইম শিল্পগোষ্ঠীর মালিক আবদুল্লাহ আল ফুতাইম। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ৪৭০ কোটি ডলার। আবদুল্লাহ আল ফুতাইমের ছেলে ওমর প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। আল ফুতাইম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওমর। ১৯৫৫ সালে এই গ্রুপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে টয়োটা ব্র্যান্ডের বিশেষ পরিবেশক হয়। আজও তারা সেখানে তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে। আল ফুতাইমের কাছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে হার্টজ, আইকিয়া, টয়েজ আর আস এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সারের ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স রয়েছে।

আবদুল্লাহ বিন আহমদ আল গুরাইর ও পরিবার

আবদুল্লাহ বিন আহমদ আল গুরাইর
আবদুল্লাহ বিন আহমদ আল গুরাইরছবি: আল গুরাইর ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

আরব ধনীদের তালিকায় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ বিন আহমদ আল গুরাইর ও তাঁর পরিবারের অবস্থান সপ্তম স্থানে। তাদের নিট সম্পদের মূল্য ৪৬০ কোটি ডলার। আবদুল্লাহ বিন আহমদ আল গুরাইর ১৯৬৭ সালে মাশরেক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক।

গুরাইর ২০১৯ সালে ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যান।

আবদুল্লাহ বিন আহমদ আল গুরাইরের নামে নামকরণকৃত হোল্ডিং কোম্পানিটির খাদ্যসামগ্রী, নির্মাণ ও আবাসন খাতে ব্যবসা রয়েছে। কোম্পানির নেতৃত্বে গুরাইর পরিবারের বাইরের লোকজনও আছেন।

গুরাইরের মালিকানাধীন নির্মাণ কোম্পানি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন বুর্জ খলিফার বাইরের আবরণটি তৈরি করেছে। দুবাই মেট্রোর নির্মাণকাজের সঙ্গেও তারা যুক্ত ছিল।

হামাদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানি

হামাদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানি
হামাদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানিছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

আরব ধনীদের তালিকায় কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামাদ বিন জসিম বিন জাবের আল থানির অবস্থান অষ্টম। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩৯০ কোটি ডলার। তিনি ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাতারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত থানি কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদেও ছিলেন। তাঁর মামা ১৯৭১ সালে কাতারে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বর্তমান আমিরের আত্মীয়।

‘প্যারামাউন্ট সার্ভিসেস হোল্ডিংস’ নামে একটি কোম্পানির মাধ্যমে আল থানি জার্মানির ডয়চে ব্যাংকের ৩ শতাংশ অংশীদারত্ব নিয়েছেন।

ইমাদ আল মুহাইদিব

ইমাদ আল মুহাইদিব সৌদি আরবের দাম্মামভিত্তিক পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আল মুহাইদিব গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। তাঁর নিট সম্পদের পরিমাণ ৩৮০ কোটি ডলার। এই শিল্পগোষ্ঠী ভোক্তা পণ্য, অবকাঠামো, নির্মাণ, রিয়েল এস্টেট ও আর্থিক খাতে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে। আল মুহাইদিব গ্রুপে ইমাদের ২৮ শতাংশ মালিকানা আছে।

১৯৪৩ সালে ইমাদের বাবা আবদুল কাদির এ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রথমে খাদ্য ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি নির্মাণসামগ্রী ও আবাসন খাতে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন।

আবদুল কাদিরের মৃত্যুর পর ১৯৯৬ সালে ইমাদ এবং তাঁর ভাই ইসাম ও সুলাইমান ব্যবসার দায়িত্ব নেন। তাঁরা পরিবারের আরও চার সদস্যের সঙ্গে মালিকানা ভাগ করে নেন।

বর্তমানে সৌদি আরব ও মিসরের অন্তত ১৬টি শেয়ারবাজারভিত্তিক কোম্পানিতে আল মুহাইদিব গ্রুপের অংশীদারত্ব আছে।

১০

ইসাম আল মুহাইদিব

ইসাম আল মুহাইদিব সৌদি আরবের দাম্মামভিত্তিক পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আল মুহাইদিব গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তালিকায় ৯ম অবস্থানে থাকা ইমাদ তাঁর ভাই। ইসামের নিট সম্পদের পরিমাণ ৩৬০ কোটি ডলার। এ গ্রুপ ভোক্তা পণ্য, অবকাঠামো, নির্মাণ, আবাসন ব্যবসা ও আর্থিক খাতে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকে। গ্রুপের ২৮ শতাংশের মালিক ইসাম।

এ গ্রুপ ১৯৪৩ সালে ইসামের বাবা আবদুল কাদির প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রথমে খাদ্য ব্যবসায়ী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরে তিনি নির্মাণসামগ্রী ও আবাসন খাতে তাঁর ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন।

১৯৯৬ সালে বাবা আবদুল কাদিরের মৃত্যুর পর ইসাম এবং তাঁর ভাই ইমাদ ও সুলাইমান ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁরা পরিবারের আরও চার সদস্যের সঙ্গে মালিকানা ভাগ করে নেন।

বর্তমানে সৌদি আরব ও মিসরের অন্তত ১৬টি শেয়ারবাজারভিত্তিক কোম্পানিতে আল মুহাইদিব গ্রুপের অংশীদারত্ব আছে।