Image description

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ঘোষণা করেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তার সরকার প্রস্তুত আছে।

মিডল ইস্ট মনিটরের বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে- ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের মতে, পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি অর্জনের একমাত্র উপায় হলো 'দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান'। কিন্তু শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে হয়- জনাব প্রেসিডেন্ট, এটি বর্তমানের কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নয় বরং এটি সুদূর অতীতের।

'দুই রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান' এর মৃত্যু হয়েছে। এখন এই সমাধান সূত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলোই কেবল টিকে আছে, আর সবই শেষ হয়ে গেছে। নদী থেকে সাগর পর্যন্ত পুরো ভূখণ্ড ফিলিস্তিন নামক একক রাষ্ট্র গড়ার মাধ্যমেই কেবল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যেখানে দখলদার ইসরাইলের অস্তিত্ব থাকবে না।

দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি ছিল লোকদেখানো। জনমতের ক্ষোভ প্রশমন ও জবাবদিহিতা বিলম্বিত করার এক হাতিয়ার মাত্র। এটি কখনই ফিলিস্তিন মুক্তির জন্য উত্থাপিত হয়নি। এটি একটি কূটনৈতিক মরীচিকা, এটি কোনো সমাধান সূত্র নয়।

কয়েক দশক ধরে বিশ্ব নেতারা এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে আসছেন, একই সাথে তারা ইসরাইলকে তা বাস্তবায়নের প্রতিটি সম্ভাবনা ধ্বংস করার অনুমতিও দিয়েছেন। যেমন, অধিকৃত অঞ্চলে বসতি স্থাপন, ফিলিস্তিনিদেরকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, গাজা অবরোধ করা এবং দখলকৃত অঞ্চল জুড়ে বর্ণবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

বর্তমানে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে সাত লাখেরও বেশি ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী ফিলিস্তিনি ভূমিতে অবৈধভাবে বাস করছে এবং ক্রমেই এই সংখ্যা বাড়ছে। এটা অস্থায়ী দখল নয়; এটা স্থায়ী বাস্তবতা। শক্তিধর দেশগুলো নানা ভাবে এটাকে সমর্থন দিয়েছে, তারা এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মোকাবেলায় ইহুদিবাদীদের অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছে এবং এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।

নেতানিয়াহু বা অন্য কোনো প্রধানমন্ত্রী এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি প্রদর্শন করেনি। তারা প্রতিনিয়ত তাদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের জন্য কার্যত এখন আর রাষ্ট্র বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। এখন যা আছে সেটাকে কি কোনো রাষ্ট্র বলা যায়? সেখানে যা আছে তা ইহুদিবাদীদের চেকপয়েন্ট, দেয়াল এবং সশস্ত্র অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের মাধ্যমে ঘেরাও কয়েকটি বিক্ষিপ্ত এলাকা? কার্যত এটি এখন একটি বান্টুস্তান (বর্ণবাদের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ বাসিন্দাদের জন্য মনোনীত একটি এলাকা) যার সীমানা, আকাশসীমা বা সম্পদের উপর ফিলিস্তিনিদের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই?

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোই একমাত্র ব্যক্তি নন যিনি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলছেন। বিশ্বের অনেক নেতাই সৎ বিশ্বাসে বা প্রতারণার অংশ  হিসেবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেন, কারণ বাহ্যিকভাবে এটাকে যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়। এই পরিকল্পনা ইসরাইলের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা চাপিয়ে না দিয়ে তাদের কূটনৈতিক মুখ রক্ষা করে যাচ্ছে। যেকোনো সমাধান সূত্রকে অবশ্যই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। বাস্তবতা হলো ভৌগোলিকভাবে, রাজনৈতিকভাবে বা নৈতিকভাবে দখলদার ইসরাইলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ও কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

সর্বোপরি উপনিবেশবাদী এবং উপনিবেশবাদের শিকার এই দুইয়ের মধ্যে কোনও নৈতিক সমতা নেই। ইসরাইল অবৈধভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এখনও বল প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি তা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে "দুই-রাষ্ট্র" প্রস্তাবের অর্থ কী? এটির অর্থ এমন একটি সত্তার স্বীকৃতি যা ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনকে ধ্বংস করে চলেছে। এটি এমন এক সরকারকে পুরস্কৃত করা, যারা কখনও ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এর অর্থ হলো, ১৯৪৮ সালের সীমান্তের মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনিকে ত্যাগ করা। এর অর্থ হলো মজলুম জনগণকে তাদের ভূমির মালিকানা ত্যাগ করতে বাধ্য করা। আর এর বিনিময়ে তাদেরকে দেওয়া হবে বিক্ষিপ্ত ধ্বংসস্তূপের উপর একটি কাল্পনিক সার্বভৌমত্ব।

এই সমাধানে কোনও ন্যায়বিচার নেই। আর ন্যায়বিচার না থাকলে কোনো দিন সেখানে শান্তি থাকবে না। 

কাজেই জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে কেবল একটি রাষ্ট্র থাকবে। এখন প্রশ্ন হলো রাষ্ট্রটির রূপ কেমন হবে? এটি কি একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র হবে যেখানে ইহুদিবাদীরা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে শাসন করবে এবং ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করবে? নাকি এটি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে সমতার ভিত্তিতে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে?

এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই ফিলিস্তিনি জনগণের কাছ থেকে আসতে হবে। সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ফিলিস্তিনি বিশেষকরে তাদের তরুণ প্রজন্মের মাঝে একক রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দ্বি-রাষ্ট্রে কোনো সমাধান নেই। ইহুদিবাদ ও উপনিবেশবাদ বিহীন মুক্ত, স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাধান হতে পারে, যেখানে বর্তমান ইসরাইল নামক অবৈধ ব্যবস্থার অস্তিত্ব থাকবে না এবং ফিলিস্তিনের প্রকৃত মালিকেরা তারা মুসলমান, খ্রিষ্টান ও ইহুদি-যাই হোক না কেন স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। বিশ্ববাসীর এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার সময় এসেছে।#

পার্সটুডে