Image description

স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট এমন একটি উদাহরণ যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদীদের পদ্ধতিগত সহিংসতা উপলব্ধি করা যায়।

স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট একটি মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা যা ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালনা করা হয়। এই গবেষণায় কয়েক জন ছাত্রকে একটি কৃত্রিম কারাগারে কয়েদী ও কারারক্ষীর ভূমিকায় রোল-প্লে করানো হয়। ছয় দিনের গবেষণায় দেখা যায়, কারারক্ষীর ভূমিকায় থাকা ছাত্ররা প্রচন্ড অত্যাচারী মনোভাবের হয়ে পড়ে এবং কয়েদীর ভূমিকায় থাকা ছাত্ররা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। সর্বোপরি এই পরীক্ষার ফলাফল ভয়াবহ ছিল।

নিউ আরব সংবাদ মাধ্যমকে উদ্ধৃত করে পার্সটুডে জানিয়েছে- এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা ছিল, কিন্তু এই গবেষণা সহিংসতা বোঝার জন্য একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এই পরীক্ষাটি ফিলিস্তিনিদের জীবন-বাস্তবতার সাথে অনেকটাই মিলে যায়।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই কয়েকজন আধিপত্য প্রয়োগকারীর ভূমিকা পালন করেছিল। গাজা এবং পশ্চিম তীরে এই আধিপত্য প্রতিদিন প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং জীবন দিয়ে এই মূল্য দিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা।

পরীক্ষাগারে কারারক্ষীর ভূমিকা পালনকারীরা শুরুতে নিপীড়ক ছিলেন না; কিন্তু পরবর্তীতে তারা এমন হয়ে ওঠে, কারণ তাদের পরিবেশ তাদের এমনটি হতে উৎসাহিত করেছিল। দখলদারিত্বও একই কাজ করে: এটি এমন পরিস্থিতি তৈরি করে যেখানে সহিংসতা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং শান্তির পরিবর্তে আনুগত্যই প্রাধান্য পেথে থাকে।

ইহুদিবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনিদে পানি, বিদ্যুৎ, চলাচল এমনকি মৃত্যুর সময়টা পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। গাজার মানুষ অবরুদ্ধ জীবনযাপন করে। তাদের সব দিক থেকে বন্দী। ফিলিস্তিনিরা কেবল তাদের জমিই নয়, তাদের মর্যাদাও হারিয়েছে। তাদেরকে সব দিক থেকে বিলীন করতেই এমনটা করা হয়েছে।

স্ট্যানফোর্ডের এক্সপেরিমেন্ট ছিল ৬ দিনের, ফিলিস্তিন ভূগছে ৭৭ বছর ধরে

স্ট্যানফোর্ডে ছয় দিনের এক্সপেরিমেন্ট থেকে যা বেরিয়ে এসেছিল তা সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনে চলছে। এই তুলনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোনো একটি দল বা গোষ্ঠী যখন অন্য দল বা গোষ্ঠীর উপর সীমাহীন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তখন কী ঘটে তার সরাসরি প্রতিফলন গাজায় দেখা যাচ্ছে। স্ট্যানফোর্ডে পরীক্ষা চলাকালে কিছু কয়েদী প্রচন্ড কান্নাকাটি ও চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করায় ৬দিনের আগেই গবেষণাটি বন্ধ করে দিতে হয়েছিল, কিন্তু ফিলিস্তিনে  নৃশংস দখলদারি ও আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে দীর্ঘ ৭৭ বছর ধরে।

ইসরাইলি অপরাধের সহযোগী আমেরিকা

দখলদার ইসরাইলের সব অপকর্মের অংশীদার আমেরিকা। আর্থিক সাহায্য এবং রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে অপরাধী ইসরাইলকে আগলে রেখেছে আমেরিকা। তাদের সহযোগিতায় মানবতাবিরোধী অপরাধ টিকে আছে। সব প্রেসিডেন্টের আমলেই অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত ছিল এবং এখনও রয়েছে। গোটা বিশ্বের বিবেক কিছুটা জাগ্রত হলেও মার্কিন প্রশাসন অপরাধীদের রক্ষা করেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতারা নানা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত থাকলেও গাজার শিশু তথা মানুষের লাশ পড়ছে একের পর এক। আমেরিকার জনগণের ট্যাক্স টাকায় এমন হত্যাযজ্ঞ টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

ফিলিস্তিনিরা অসহায়

স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্টে অংশগ্রহণকারীরা বন্দির চরিত্র বেছে নিয়েছিলেন স্বেচ্ছায়। কিন্তু কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জন্ম থেকেই তাদের উপর বন্দিদশা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বাসস্থান রূপক নয়, তাদের কষ্ট কৃত্রিম নয়। এ কারণে তাদের প্রতিরোধও কৃত্রিম নয়।

ফিলিস্তিনিদের মুছে ফেলার প্রকল্প চলমান থাকলেও ফিলিস্তিনিরা নীরব-নিস্তব্ধ থেকে তা মেনে নিচ্ছে না, তারাও বেঁচে থাকার সব আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের ব্যবস্থা করছে, সন্তান লালন-পালন করছে, কবিতা লিখছে, নানা বীরত্বগাথা চর্চা করছে, চুরি হওয়া জীবন পুনরুদ্ধারের জন্য আপ্রান লড়াই করছে।#

পার্সটুডে