
একসময় গার্মেন্টসে কাজ করতেন, এখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। লি জে-মিয়ংয়ের এই চমকপ্রদ উত্থান শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
শিশু বয়সেই পরিবারকে সাহায্য করতে স্কুল ছেড়ে কারখানায় কাজ শুরু করেছিলেন লি। এক দুর্ঘটনায় তার কনুই মারাত্মকভাবে জখম হয়। পরে স্কলারশিপ পেয়ে আইন পড়েন এবং আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই অভিজ্ঞতাই তাকে গড়ে তোলে এক সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে।
লি’র রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নাটকীয়তা কম নয়। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে হারলেও এবার তিনি সেই প্রতিদ্বন্দ্বী ইউন সুক ইয়েওলের স্থলাভিষিক্ত হতে প্রস্তুত। প্রেসিডেন্ট ইউনকে সামরিক আইন জারির অভিযোগে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণের পরই নতুন নির্বাচনের পথ খুলে যায়। সেই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দিয়েছেন লি নিজেই।
২০২৪ সালে এক সমাবেশে এক হামলাকারী তার গলায় ছুরি চালায়। হামলার উদ্দেশ্য ছিল তাকে হত্যা করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ বন্ধ করা। তবে বেঁচে ফিরে লি আবারও জনসমর্থনে জেগে উঠেছেন।
রাজনীতিতে তার প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে—দক্ষিণ কোরিয়ার এআই শিল্পকে বিশ্বের শীর্ষ তিনে পৌঁছে দেওয়া এবং সামরিক আইন জারির সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা।
লি একসময় মেয়র ছিলেন সিউংনামের, সেখানেই তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় কুকুর মাংস বাজার বন্ধ করে দেন। এরপর গিয়ংগি প্রদেশের গভর্নর হিসেবেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ। একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে অনিয়ম এবং নির্বাচনী আইনে তথ্য গোপনের মামলায় এখনো চলছে আইনি লড়াই। যদিও তিনি এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী কিম মুন-সু লি’র বিরুদ্ধে বলেন, ‘এত বড় দুর্নীতির অভিযোগের পরও কীভাবে আপনি জনসেবার পদে দাঁড়ান?’
লি অবশ্য নির্লিপ্ত। তার ভাষায়, আমি জানি, ঠান্ডা রুমে বসে রাস্তায় কাঁপতে থাকা মানুষদের কথা ভাবা যায়। কিন্তু তাদের কষ্ট সত্যিকার অর্থে বুঝতে হলে, নিজেও একসময় সেখানে থাকতে হয়।
আর সে কারণেই দক্ষিণ কোরিয়ার অনেকেই মনে করছেন, গার্মেন্টসকর্মী লিই হতে পারেন তাদের পরবর্তী রাষ্ট্রপ্রধান।