
চলতি মাসের শেষে জাপান সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের। আসন্ন সফরের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা ও দ্বিপাক্ষিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য আগামী ১৫ মে টোকিওতে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি) নির্ধারিত ছিল। এর নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের। হঠাৎ করে নির্ধারিত এফওসি স্থগিত করতে নোট ভার্বালের (কূটনৈতিকপত্র) মাধ্যমে জাপানের কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেন পররাষ্ট্র সচিব। সোমবার (১২ মে) এ বিষয়ে নোট ভার্বালের মাধ্যমে জাপানের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
প্রস্তুতিমূলক বৈঠক স্থগিতের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অবহিত হলে সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়— পররাষ্ট্র সচিবের অনুপস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ সহকারী লুৎফে সিদ্দিকী ওই বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। তবে, বৈঠকটি তখন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরিবর্তে প্রস্তুতিমূলক সভা হিসেবে অভিহিত হবে।
সোমবার বিকালে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের মোবাইলে এসএমএস পাঠানো হয় এবং পরে তার দফতরে গেলে পররাষ্ট্র সচিবের অফিসের পরিচালক জানান যে ‘এ বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) পররাষ্ট্র সচিব কথা বলবেন। এর মধ্যে অনেক ডেভেলপমেন্ট হতে পারে।’
এই গোটা বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা। বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার জাপানের সঙ্গে এফওসি নিয়ে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে জানান তারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘গোটা বিষয়টি হতাশাজনক। জাপান আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং প্রধান উপদেষ্টার সফরের কারণে সম্ভাব্য বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বৈঠক নিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা ক্ষতির কারণ হতে পারে।’
জাপানের সঙ্গে এফওসি
আগামী ১৫ মে জাপানের সঙ্গে যে এফওসি হবে– সেটি গত মাসে নির্ধারিত হয়েছিল। এটি নিয়ে প্রাক-আলোচনার জন্য গত সপ্তাহে জাপানের রাষ্ট্রদূতের বাসায় এক নৈশভোজে পররাষ্ট্র সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর
নিকেই ফোরামে অংশগ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে জাপান সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। আগামী ২৯ মে ওই ফোরামে বক্তব্য রাখবেন তিনি। এর পরের দিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে প্রধান উপদেষ্টার। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়, বিশেষ করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। জাপানের সঙ্গে আরও আলোচনা করে বাংলাদেশ তার অবস্থান ঠিক করবে।’
দুর্বল হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
জাপানের সঙ্গে এফওসি স্থগিত করার মতো সিদ্ধান্তে দুর্বল হচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান। যে বৈঠকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, সেটিতে এখন নেতৃত্ব দেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
সাবেক একজন কূটনীতিক এ বিষয়ে বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ম্যান্ডেট আছে। বিদেশি সব ধরনের যোগাযোগ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হওয়া দরকার। তবে, মন্ত্রণালয় যদি তার ম্যান্ডেট রক্ষা করতে না পারে, তবে অন্য মন্ত্রণালয় ওই শূন্যতা পূরণ করবে।’
তিনি বলেন, ‘এটি দুঃখজনক যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সিদ্ধান্তের কারণে তার যেখানে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেটি এখন অন্য কেউ দিচ্ছে।’