Image description
 

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার (৭ মে) গভীররাতে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে ভারত। অপারেশন সিনদুর বা সিঁদুর অভিযানের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর থেকেই আলোচনায় এসেছেন দুই নারী সেনা কর্মকর্তা- কর্নেল সোফিয়া কোরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যমিকা সিং।

গতকাল গুগলে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করা ব্যক্তি ছিলেন কর্নেল কোরেশি।

কর্নেল সোফিয়া কোরেশি: এক অগ্রগামী সেনা

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যালস কর্পসের অত্যন্ত সুযোগ্য একজন কর্মকর্তা কর্নেল কোরেশি। তিনি ১৯৭৪ সালে গুজরাটে এক সেনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার নানা সেনাবাহিনীতে দায়িত্বপালন করেছেন।

বায়োকেমিস্ট্রিতে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন কোরেশি। পরবর্তীতে অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে যোগদান করে সেখান থেকে সিগন্যালস কর্পসের অন্তর্ভুক্ত হন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সেনাসদস্য হিসেবে দক্ষতা ও কৃতিত্বের প্রমাণ রেখেছেন তিনি। 

পুনেতে আয়োজিত ১৮টি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে আয়োজিত মহড়ায় ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই পুরো আয়োজনে একমাত্র নারী কমান্ডার হিসেবে সবার নজর কাড়েন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি হচ্ছে প্রথম নারী কর্মকর্তা, যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোনও একটা কন্টিজেন্টের নেতৃত্ব দেন।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সেনা কর্মকর্তা হিসেবে নিজের দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন কর্নেল কোরেশি। ২০০৬ সালে কঙ্গোর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০১০ সাল থেকে নিয়মিতভাবে শান্তিরক্ষী মিশনে তার ভূমিকা রয়েছে।

এছাড়া, জাতীয় পর্যায়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং ত্রাণ বিতরণে নেতৃত্ব প্রদান করে দেশের অভ্যন্তরেও নিজের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি।

সিঁদুর অভিযানের ব্রিফিংয়ের সময় তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটনের উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

কর্নেল কোরেশির স্বামী হচ্ছেন মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রির কর্মকর্তা মেজর তাজউদ্দিন কোরেশি। এই দম্পতির এক সামির নামে এক সন্তান রয়েছে।

আকাশকন্যা ব্যমিকা

সিঁদুর অভিযানের সহ নেতৃত্বে ছিলেন উইং কমান্ডার ব্যমিকা সিং। তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন অত্যন্ত দক্ষ হেলিকপ্টার চালক। প্রকৌশল ড্রিগ্রীধারী ব্যমিকা শিক্ষাজীবনে ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পসের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে এই দুইয়ে মিলেই তার বিমানবাহিনীতে যোগদানের রসদ যোগায়।

vyoimika singhউইং কমান্ডার ব্যমিকা সিং। ছবি: প্রেস ব্রিফিং

ব্যমিকার অভিজ্ঞতায় রয়েছে চেতক ও চিতা হেলিকপ্টার আড়াই হাজার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে উড়ানো। তিনি এই কাজ আবার সম্পন্ন করেছেন জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তরপূর্ব ভারতের দুর্গম এলাকায়। ২০২১ সালে তিনি একটি ত্রি-সেনা মহিলা অভিযানে অংশ নেন, যেখানে তারা ২১ হাজার ৬৫০ ফুট উচ্চতার মনিরাং পর্বত আরোহণ করেন।

ব্যমিকা শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে আকাশকন্যা। তিনি আক্ষরিক অর্থেই নিজের পেশা ও দক্ষতা দিয়ে নামের সার্থকতা রক্ষা করেছেন।

এই দুই কর্মকর্তা যখন সিঁদুর অভিযানের বিবরণ তুলে ধরেন, তখন তাদের দৃঢ় অবস্থান ও স্পষ্ট ভাষা ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নারীদের অগ্রণী ভূমিকাকে নতুন মাত্রা দেয়। তারা প্রমাণ করেছেন—দেশরক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ ও সুযোগ্য নেতৃত্বের জন্য লিঙ্গ কোনও বাধা নয়।

তথ্যসূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দুস্তান টাইমস