
ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দেওয়া অ্যাপ স্কাইপি অবশেষে তার পরিসমাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে। আজ, ৫ মে ২০২৫, স্কাইপি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ২২ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী মানুষকে সংযুক্ত রাখার এই সফটওয়্যারটি আজ থেকে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে।
আ্যাপটির মালিক প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট জানিয়েছে, ৫ মে, ২০২৫ থেকে আর ব্যবহার করা যাবে না স্কাইপি। এর বদলে মাইক্রোসফট টিমস নামের প্ল্যাটফর্মটিকে সামনে আনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। মাইক্রোসফট বলছে, যোগাযোগ সেবা উন্নত করার জন্যই তারা এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করা স্কাইপি, এক সময় ছিল বিনামূল্যে ভয়েস ও ভিডিও কলের ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টিকারী একটি নাম। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্কাইপির মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ৩০ কোটিরও বেশি। ফেইসটাইম বা জুম আসার অনেক আগেই স্কাইপি বদলে দিয়েছিল বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের ধরন।
ব্যক্তিগত, পেশাদার, এমনকি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক যোগাযোগের জন্য স্কাইপি ছিল একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। পরিবার ও প্রবাসীদের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ার ক্ষেত্রে এটি বড় ভূমিকা পালন করে।
২০১১ সালে মাইক্রোসফট স্কাইপিকে ৮.৫ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয় এবং এটি তাদের যোগাযোগ কৌশলের মূল অংশে পরিণত করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হোয়াটসঅ্যাপ, জুম এবং শেষ পর্যন্ত মাইক্রোসফটের নিজস্ব ‘টিমস’ অ্যাপ জনপ্রিয়তা পাওয়ায় স্কাইপি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারায়।
২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাইক্রোসফট ঘোষণা করে, তারা ২০২৫ সালের ৫ মে স্কাইপি বন্ধ করে দেবে। তাদের উদ্দেশ্য হলো নিজেদের পরিসেবা আরও সহজ করে তোলা এবং Teams-এ যোগাযোগ ও সহযোগিতা ফোকাস করা।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, স্কাইপি ব্যবহারকারীরা এখন থেকে মাইক্রোসফট Teams ব্যবহার করে আগের চ্যাট, কন্টাক্ট ও হিস্টোরি অ্যাক্সেস করতে পারবেন। Teams-এ লগইন করতে শুধু স্কাইপিতে ব্যবহৃত ই-মেইল ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলেই হবে।
skype.com-এ গিয়ে "Start using Teams" ফিচার ব্যবহার করে সহজেই এই রূপান্তর সম্পন্ন করা যাবে।
মাইক্রোসফট জানিয়েছে, যারা স্কাইপে থাকা ডেটা রাখতে চান, তাদের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে ব্যবহারকারীরা নিজেদের চ্যাট, ফাইল এবং কনট্যাক্ট ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এর পরে স্কাইপি সার্ভার থেকে সব ডেটা স্থায়ীভাবে মুছে ফেলা হবে।
স্কাইপি শুধু একটি অ্যাপ নয়, এটি ছিল একটি যুগের অংশ। করোনা মহামারি শুরুর আগে পর্যন্ত এটি ছিল রিমোট কমিউনিকেশনের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। আজ, তার বিদায়ের দিনে অনেকেই স্মৃতিচারণ করছেন এই প্রযুক্তি সঙ্গীর প্রতি।