
যুক্তরাজ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনি লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন ডিউক অব সাসেক্স হেনরি চার্লস আলবার্ট ডেভিড অথবা প্রিন্স হ্যারি। তিনি রাজপরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা নিরসনের আকাঙ্ক্ষাও জানিয়েছেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ হতাশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানান। শুক্রবার (২ মে) যুক্তরাজ্যের আদালতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মামলায় হেরে যাওয়ার পর ক্যালিফোর্নিয়া বসে বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন প্রিন্স হ্যারি। সেটির চুম্বকঅংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
মামলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ডিউক অব সাসেক্স বলেন, আমি চাই পারিবারিক পুনর্মিলন হোক। আর কোনো ঝগড়া নয়, জীবন অনেক মূল্যবান। তিনি জানান, ব্রিটেনের রাজা অর্থাৎ তার বাবা চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ বা
রাজা চার্লস তৃতীয় তার সঙ্গে কথা বলছেন না।
হ্যারি বলেন, এই নিরাপত্তা বিষয়টা নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা হয় না। আমি জানি না, তিনি আর কতদিন আমাদের মাঝে থাকবেন। এই অবস্থায় আমি আর বিরোধ চাই না।
২০২০ সালে রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান হ্যারি। এরপর থেকেই তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সীমিত করা হয়। তারপর থেকেই যুক্তরাজ্যে অবস্থানের জন্য নিজের ও পরিবার তথা স্ত্রী ডাচেস অব সাসেক্স র্যাচেল মেগান মার্কল, প্রিন্স আর্চি হ্যারিসন মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর ও প্রিন্সেস লিলিবেট ডায়ানা মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসরের জন্য পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি লড়াই চালিয়ে আসছিলেন তিনি।
কিন্তু সর্বশেষ আদালত রায়ে জানান, হ্যারি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা তাকে পূর্ণ রাজকীয় নিরাপত্তা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। আদালত মনে করেন, হ্যারির ব্যক্তিগত অভিমান আইনি যুক্তিতে রূপ নেয়নি।
আদালতের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় হ্যারি বলেন, আমি হতবাক। আমার সবচেয়ে খারাপ শঙ্কাগুলো সত্যি হয়ে গেল। আমি হতাশ—এমন নয় যে মামলায় হেরেছি বলে, বরং যারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে তারা মনে করছে এটা ঠিক। এটা কি তাদের কোনো বিজয়?
তিনি দাবি করেন, এই সিদ্ধান্তে রাজপরিবারের ‘প্রভাব’ ছিল। রাজপরিবার ও জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সুরক্ষা নির্বাহী কমিটি বা প্রোটেকশন অব রয়্যালটি অ্যান্ড পাবলিক ফিগার্স এক্সিকিউটিভ কমিটির (রাভেক) সঙ্গে রাজপরিবারের এক প্রতিনিধির সম্পৃক্ততা জেনে তার ‘চোয়াল মাটিতে পড়ে গিয়েছিল’
রাভেক হলো সেই কমিটি যা ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, কূটনীতিক, বিচারপতি, বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নির্ধারণ ও অনুমোদন করে। কে কতটা উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা পাবেন— সেটিও নির্ধারণ করে এই কমিটি। ২০২০ সালে প্রিন্স হ্যারি রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার পর এ কমিটি তার ‘স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা সুবিধা’ প্রত্যাহার করে নেয় রাভেক। পরে প্রিন্স হ্যারি কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করেন, কিন্তু আদালত রাভেকের সিদ্ধান্তকে বৈধ বলে রায় দেয়। প্রিন্স হ্যারির অভিযোগ ছিল, রাভেকের সিদ্ধান্তে রাজপরিবারের পক্ষপাত এবং হস্তক্ষেপ রয়েছে, এবং তার নিরাপত্তা পর্যাপ্ত নয়।
তিনি বলেন, আমি রাজাকে কখনো বলিনি তিনি যেন হস্তক্ষেপ করেন। আমি শুধু বলেছিলাম, সরে দাঁড়ান এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তাদের কাজ করতে দিন। তিনি আরও বলেন, আমার নিরাপত্তা রাতারাতি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায় থেকে ন্যূনতম ঝুঁকিতে নামিয়ে আনা হয়। এটা কি সম্ভব? আর কারা এর পেছনে ছিল, সেটাও এখন পরিষ্কার।
সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি বলেন, এই নিরাপত্তাহীনতা আমাকে প্রতিদিনই প্রভাবিত করে। এখন আমি যুক্তরাজ্যে ফিরতে পারি কেবল রাজপরিবারের কোনো আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেলে, কারণ তবেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, সবসময় ভালোবেসেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এখন আমার সন্তানদের নিজের মাতৃভূমি দেখাতে পারব না।
২০২০ সালে রাজপরিবারের পক্ষ থেকে মেগান ও তাকে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় ফেলেছিল বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, তারা জানত আমরা ঝুঁকিতে, তবু আমাদের ফেরানোর উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা তুলে নিয়েছিল। কিন্তু যখন দেখল আমরা ফিরিনি, তখনও কি আমাদের নিরাপদ রাখা তাদের দায়িত্ব নয়?
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, আদালতের রায় থেকে স্পষ্ট হয়েছে, এই পথে আর আইনি সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। আমি চাই কেউ যদি আগেভাগেই বলে দিত, তাহলে এত দূর আসতাম না।
তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা রাভেকের গঠন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন বলেও জানান।
সাক্ষাৎকারের শেষ দিকে হ্যারি বলেন, এই ঘটনাগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পারিবারিক একটি দ্বন্দ্ব। আজ পাঁচ বছর পর আমরা এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে পুরো বিষয়টাই একটি ছাদের নিচে আমাদের আটকে রাখার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু হয়েছিল। এটা খুবই দুঃখজনক।
এদিকে বাকিংহাম প্যালেস জানিয়েছে, এসব বিষয় বহুবার আদালতে খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং প্রতিবার একই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া হয়েছে।