Image description
 

৭ অক্টোবর ২০২৩-এর পর ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা শুরু হওয়ার পর বাচ্চাদের লাশ দেখে চোখ শুকনো কারোরই নেই। সবাই কিছু করতে চান ফিলিস্তিনে না খেয়ে থাকা মানুষের জন্য। টাকা পাঠাতে চান। কিন্তু আমরা দেখেছি ইউনিসেফ খাবারের গাড়ি নিয়ে বসে আছে রাফা ক্রসিংয়ে। ইসরাইল সরকার বলছে, একটা গমের দানাও ঢুকতে দেবে না।

 

আসলে গাজায় খাবার ঢোকানো সমস্যা, খাবার কেনার টাকা নেই। গাজার মুক্তিযোদ্ধাদের মূলত দরকার অস্ত্র, যা দিয়ে ওরা লড়াই করতে পারবে-খাবার ঢোকার রাস্তাটা পরিষ্কার রাখতে পারবে। এই সাহায্য আসলে আপনি-আমি, সাধারণ মানুষ দিতে পারব না-কোনো দেশকে দিতে হবে। মক্কায় এবারের ইতিকাফে এক ফিলিস্তিনি ভাই এসে দুদিন ছিলেন। তিনি বললেন, ইয়েমেন ছাড়া আর কোনো দেশই আসলে ওদের সাহায্য করছে না।

 

ফিলিস্তিনিদের জন্য বাংলাদেশিরা কিছু করতে চাইলে আমাদের উচিত আগে আমাদের দেশে কাজ করা। বাংলাদেশ যেন ফিলিস্তিন না হয় সে জন্য প্ল্যান করা, দায়িত্ব নেওয়া ও ফান্ডিং করা। কারণ বাংলাদেশকে ফিলিস্তিন বানানোর জন্য পশ্চিমারা এবং ভারত কাজ করছে, প্ল্যান করছে, ফান্ডিং করছে।

 

ইসরাইল ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ মেরেছে আর নিউ ইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করে বাংলাদেশে নাকি জঙ্গি আশঙ্কা আছে। ভারতের মিডিয়া প্রোপাগান্ডা দেখেন-ঠিক ইসরাইলের মতো এরা মিথ্যা কথা বলে। কিছু উগ্রবাদী হিন্দু ইসরাইলি মার্সেনারি বাহিনীতে যোগ দিয়েছে মুসলিমদের মারতে।

 

বাংলাদেশে আমাদের অনেক কিছু করার আছে, যা এখনই করা উচিত। আমাদের প্রত্যেকের যার সাধ্যে যা আছে, তা করা উচিত। আমেরিকায় ১ হাজার ৭০০-এরও বেশি থিংকট্যাংক আছে, ভারতে ২৮০টা। বাংলাদেশে সেক্যুলারদের থিংকট্যাংক আছে কিন্তু মুসলিমদের নেই। অথচ মুসলিমদের জন্য একাধিক থিংকট্যাংক দরকার, যারা গবেষণা করবেন, এ দেশকে মুসলিমদের জন্য নিরাপদ করার জন্য কী কী করা উচিত, কীভাবে করা উচিত।

 

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত খুব নাজুক। ছোট্ট গাজায় কতগুলো হাসপাতাল কাজ করত, ইসরাইল ধ্বংস করার আগে চিন্তা করুন। বাংলাদেশেও মিশনারি স্টাইলে প্রতিটি জেলা শহরে হাসপাতাল থাকা দরকার। বিজাতীয় মিশনারি এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দরকার-মুসলিমদের জন্য সুদমুক্ত কর্দে হাসানার ক্ষুদ্রঋণ উদ্যোগ নেওয়া দরকার প্রতিটি গ্রামে, শহরের মহল্লায়।

 

এ কাজগুলো নিজে না করতে পারলে আপনার আয়ের একটা অংশ আলাদা করেন, এ ধরনের প্রজেক্ট ফান্ডিং করার জন্য। মাস্তুল ফাউন্ডেশন, হাফেজ্জি ফাউন্ডেশন ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে নিয়মিত অনুদান দেন। বিশ্বস্ত মুসলিম এনজিওগুলো খুঁজে বের করে তাদের সাহায্য করুন।

 

বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় ফেসবুকে। আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকল ফেসবুকে কোনো অ্যাড দেখে প্রডাক্ট কিনবেন না। উল্টো কারো অ্যাড দেখলে তার প্রডাক্ট বর্জন করুন। যদি আপনারা অ্যাড দেখে প্রডাক্ট না কেনেন, তাহলে ব্যবসায়ীরাও ফেসবুকে অ্যাড দেবেন না। আপনারা যদি অ্যাড দেখে প্রডাক্ট কেনেন, ব্যবসায়ীরা অ্যাড দেবেনই। আপনারা ক্রেতারা সচেতন হন। আপনার টাকা দিয়ে বাচ্চাদের মারা হচ্ছে-এটা আপনারা মেনে নিয়েন না প্লিজ।

আপনার গ্রামে মাসে ২০০০ টাকা দিয়ে একটা মক্তবে বাচ্চাদের কোরআন এবং ইসলাম শেখার ব্যবস্থা করেন। এগুলোর কিছুই না পারলে অন্তত নিজে ইসলাম শেখেন, কোরআন শেখেন- অন্যকে শেখান।

 

খাওয়া-ঘুমের চক্র থেকে বের হয়ে আসেন। আপনার চারপাশে তাকান-অনেক কিছুর দরকার আছে সমাজের। বাংলাদেশকে যদি আমরা এমন একটা দেশ বানাতে পারি, যা দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে সাহায্য করবে, তাহলেই ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু করা হবে।