Image description
 

গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) ভয়াবহ ভূমিকম্পের সময় ব্যাংককের উঁচু ভবনগুলো বিপজ্জনকভাবে দুলতে দেখা গেছে। এমনকি ছাদের সুইমিং পুল থেকে পানি ছিটকে পড়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে। তবে চাতুচাক জেলার অডিটর জেনারেলের অফিসের নির্মাণাধীন সদর দপ্তরটিই একমাত্র বহুতল ভবন, যা ধসে পড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন শুধু এই ভবনটিই ধসে পড়ল? বাকিগুলো কেন অক্ষত?

ব্যাংককের পুরোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু ধসে পড়ল নতুন ভবন!
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ভূমিকম্প প্রকৌশলের সিনিয়র লেকচারার ড. ক্রিশ্চিয়ান মালাগা-চুকুইটেপে জানান, ২০০৯ সালের আগে ব্যাংককে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণের জন্য কোনো বিস্তৃত সুরক্ষা মান ছিল না। ফলে পুরোনো ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হলেও, ধসে পড়েছে নতুন ভবন।তিনি আরও বলেন, ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণ ব্যয়বহুল এবং থাইল্যান্ডে ঘন ঘন ভূমিকম্প না হওয়ায় ভবন নির্মাণের সময় এই ঝুঁকি বিবেচনা করা হয় না।

পুরোনো ভবনগুলোর শক্তিবৃদ্ধি, তবে নতুন ভবন কেন ধসে পড়ল?
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এমিলি সো উল্লেখ করেন, ক্যালিফোর্নিয়া, পশ্চিম কানাডা এবং নিউজিল্যান্ডের মতো জায়গায় পুরোনো ভবনগুলোকে ভূমিকম্প সহনশীল করতে পরবর্তী সময়ে শক্তিশালী করা হয়েছে।স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব থাইল্যান্ডের সভাপতি অধ্যাপক অমর পিমার্নমাস বিবিসিকে বলেন, থাইল্যান্ডের ৪৩টি প্রদেশে ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন নির্মাণের নিয়ম থাকলেও, আনুমানিক ১০ শতাংশেরও কম ভবন সেই নিয়ম মেনে তৈরি হয়েছে।তবে ধসে পড়া ৩০ তলা ভবনটি নতুন ছিল এবং নির্মাণাধীন অবস্থায় ছিল। তাই নতুন ভবন নির্মাণের নিয়ম এখানে প্রযোজ্য হওয়ার কথা।অধ্যাপক অমর পিমার্নমাস বলেন, ব্যাংককের নরম মাটিও ভবন ধসের একটি কারণ হতে পারে। কারণ নরম মাটি ভূমিকম্পের গতি তিন থেকে চার গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।তিনি আরও বলেন, উপকরণ (কংক্রিট এবং রিইনফোর্সমেন্ট)-এর গুণমান এবং কাঠামোগত ব্যবস্থায় কিছু অনিয়মও থাকতে পারে। এগুলো বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন।

ভূমিকম্পের সময় ব্যবহার নিষিদ্ধ 'ফ্ল্যাট স্ল্যাব' পদ্ধতি ব্যবহারের অভিযোগ
ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে ড. মালাগা-চুকুইটেপে জানান, ধসে পড়া ভবনটিতে ‘ফ্ল্যাট স্ল্যাব’ নির্মাণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘ফ্ল্যাট স্ল্যাব’ হলো এমন একটি নির্মাণ পদ্ধতি যেখানে ফ্লোরগুলো বিম ব্যবহার না করে সরাসরি কলামের ওপর স্থাপন করা হয়।তিনি আরও বলেন, এই নকশা ব্যয় সাশ্রয়ী এবং স্থাপত্যগত সুবিধা রাখলেও, ভূমিকম্পের সময় এটি ভঙ্গুর হয়ে দ্রুত ধসে পড়তে পারে।ফলে ব্যাংককের ৩০ তলা ভবনটি ধসের পেছনে নির্মাণ ত্রুটি এবং মাটির প্রকৃতি—দুটিই ভূমিকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি