
যুক্তরাষ্ট্র তার বৈদেশিক নীতিতে মানবিক মূল্যবোধের চেয়ে স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। যখন কোনো সংকট তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তখন তারা মানবিক সাহায্য প্রদান করে বা সামরিক হস্তক্ষেপ করে। অন্যদিকে, যেখানে তাদের স্বার্থ নেই, সেখানে নিরব ভূমিকা পালন করে।
যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে ব্যাপক সহায়তা দিচ্ছে, কারণ এটি তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে গাজায় মানবিক বিপর্যয় চললেও যুক্তরাষ্ট্র নিরব ভূমিকা পালন করছে বা ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে, কারণ ইসরায়েল তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায়, এবং ইসরায়েলকে এই অঞ্চলে তাদের "সামরিক ঘাঁটি" হিসেবে ব্যবহার করে। ইরান, সিরিয়া, হিজবুল্লাহ, হামাসসহ অন্যান্য শক্তিগুলোকে প্রতিহত করতে ইসরায়েলকে প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তাও দিয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রায়শই ইসরায়েলের সামরিক হামলাকে "আত্মরক্ষার অধিকার" বলে বৈধতা দেয়। ইসরায়েল যখন গাজায় বিমান হামলা চালায়, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্র দপ্তর শুধু "উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের" আহ্বান জানায়, কিন্তু ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় না।
মার্কিন মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সাধারণত ইসরায়েলের পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করে, যা জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু হলে সংবাদ শিরোনামে "সংঘর্ষ" বা "সহিংসতা" বলা হয়, যেন এটি একটি সমান পক্ষের লড়াই। ইসরায়েলি নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি হলে সেটিকে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়, কিন্তু গাজায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষের মৃত্যু অনেক সময় উপেক্ষা করা হয়। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো হামাসকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" হিসেবে চিত্রিত করে, কিন্তু ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে আলোচনা কম করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজায় ইসরায়েলের হামলাকে "যুদ্ধাপরাধ" বললেও মার্কিন সরকার এ নিয়ে কার্যকর কিছু করে না।
যুক্তরাষ্ট্র গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের সময় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয় না, কারণ তাদের পররাষ্ট্রনীতি মূলত ইসরায়েলের প্রতি গভীর সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্বারা পরিচালিত হয়। ইসরায়েলপন্থী লবির প্রভাব, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থ, এবং গণমাধ্যমের একপাক্ষিক প্রচার এই অবস্থানকে আরও সুসংহত করেছে। ফলে গাজায় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা গেলেও, যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায় না।