Image description

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান সোমবার ওয়াশিংটনকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সহায়তায় তাদের কঠোর কাটছাঁট পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই সহায়তা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লাখো মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে।  

ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাস এদিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সহায়তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই।’ পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, শুধু বৈশ্বিক এইচআইভি কর্মসূচিতেই এই বিঘ্ন ‘২০ বছরের অগ্রগতি নষ্ট করতে পারে, যার ফলে এক কোটি অতিরিক্ত এইচআইভি সংক্রমণ ও ৩০ লাখ এইচআইভি সংশ্লিষ্ট মৃত্যু ঘটতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রায় সব বিদেশি সহায়তা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার মধ্যে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে বড় আকারের সহায়তাও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের এমন আকস্মিক নীতি পরিবর্তন মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।  

বড় ধরনের প্রভাব
গেব্রিয়েসাস সতর্ক করে আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে সরাসরি যে অর্থ সহায়তা দেওয়া হতো, তা কেটে দেওয়ার ফলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন, ‘এইচআইভি, হামের মতো সংক্রামক রোগ থেকে শুরু করে পোলিওর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা লড়াই ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংক্রমণ শনাক্তকরণ, ওষুধ সরবরাহ ও কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, যা মজুদ ফুরিয়ে যাওয়া, সরবরাহ বিলম্বিত হওয়া বা অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ম্যালেরিয়া মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় দাতা দেশ হিসেবে কাজ করেছে, যার ফলে আনুমানিক ২২০ কোটি সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং এক কোটি ২৭ লাখ মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়েছে।’ কিন্তু এই সহায়তা বন্ধ থাকলে ‘শুধু এই বছরেই এক কোটি ৫০ লাখ নতুন ম্যালেরিয়া সংক্রমণ এবং এক লাখ সাত হাজার মৃত্যু ঘটতে পারে, যা ১৫ বছরের অগ্রগতি পিছিয়ে দেবে।’

এইচআইভি পরিস্থিতি ভয়াবহ বলেও জানান ডব্লিউএইচওর প্রধান।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক এইচআইভি প্রতিরোধ কর্মসূচির প্রায় সব অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৫০টিরও বেশি দেশে এইচআইভি চিকিৎসা, পরীক্ষা ও প্রতিরোধমূলক সেবায় তাৎক্ষণিকভাবে বিঘ্ন ঘটেছে।  তিনি বলেন, ‘আটটি দেশে এইচআইভি চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে এবং কয়েক মাসের মধ্যে এই ওষুধ শেষ হয়ে যাবে।’ এর ফলে ‘বিশ্বজুড়ে ২০ বছরের অগ্রগতি নষ্ট হয়ে এক কোটি অতিরিক্ত এইচআইভি সংক্রমণ এবং ৩০ লাখ মৃত্যু ঘটতে পারে।’

 

এ ছাড়া যক্ষ্মার বিরুদ্ধে লড়াইও হুমকির মুখে জানিয়ে গেব্রিয়েসাস বলেন, ‘গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় যক্ষ্মা (টিবি) চিকিৎসায় প্রায় আট কোটি মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।’ কিন্তু এখন ‘এই অর্জনও ঝুঁকিতে পড়েছে’।

 

তিনি আরো সতর্ক করেন, ৭০০টিরও বেশি ল্যাবরেটরি নিয়ে গঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল মিজলস অ্যান্ড রুবেলা নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে, যা পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে চলে। তিনি বলেন, ‘এটি সবচেয়ে খারাপ সময়ে ঘটছে, যখন হামের প্রকোপ আবার বাড়ছে।’

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘গত ৫০ বছরে হামপ্রতিরোধী টিকার মাধ্যমে প্রায় ৯ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই অর্জনও হুমকির মুখে।’