
কিন্তু তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় দুই মাস কেটে গেলেও রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে কোনো সমঝোতা দূরে থাক, এখনও একটা সাময়িক যুদ্ধবিরতিও হয়নি। অবশ্য ৩০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুদ্ধরত দুই পক্ষের সঙ্গে জোর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচনী প্রচারণার সেই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে ট্রাম্প জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি ঠাট্টা ছিল। তবে শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারটি আগামী রোববার (১৬ মার্চ) প্রচারিত হওয়ার কথা। তার আগেই তার আগে শুক্রবার (১৪ মার্চ) ওই সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘আমি যখন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছিলাম, ঠাট্টা করছিলাম। আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম, আমি এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চাই এবং আমার মনে হয় আমি সফল হব।’
নির্বাচনের প্রচারে একাধিক অতিরঞ্জিত প্রতিশ্রুতি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বিরোধীরা আগেও এ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। কিন্তু তার কাছ থেকে এই ধরনের স্বীকারোক্তি বেশ বিরল।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়ায় এ অভিযানের নির্দেশ দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের মধ্যদিয়ে সর্বাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয় এবং এরপর গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে।
জো বাইডেন ন্যাটোর অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার এক বছরের মাথায় শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘাত। ‘পুরনো শত্রু’ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে রাজনৈতিক ও সামরিক সব ধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব।
এরপরও যুদ্ধের প্রথম বছরেই কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি অঞ্চল দখল করে নেয় রুশ বাহিনী, যা দেশটির পাঁচ ভাগের এক ভাগের সমান। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গণভোটের মাধ্যমে অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করে মস্কো।
সংঘাতের শুরু হওয়ার পর তুরস্ক ও চীনের উদ্যোগে উভয় পক্ষ বেশ কয়েকবার আলোচনার টেবিলে বসে। বলাই বাহুল্য যে, সেসব আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। এমন প্রেক্ষিতে গত বছরের নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় জো বাইডেন সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে গত বছর সেপ্টেম্বরে তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কসভায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘রাশিয়ানরা মরছে। ইউক্রেনীয়রা মরছে। আমি চাই, এই মৃত্যু বন্ধ হোক। আর আমি সেটা করে দেখাবই। আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই যুদ্ধ বন্ধ করে দেব।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যে যুদ্ধ চলছে, তা এখনই বন্ধ হওয়া দরকার। আমি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারি। আমি যদি ভোটে জিতি, প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেয়ার আগেই আমি দুটি ফোন করব। একজনের সঙ্গে কথা বলব। অপরজনের সঙ্গে কথা বলব। দুজনকে মিলিয়ে দেব।’
তবে ক্ষমতার ৫৪ দিন পার হলেও এখনও যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেননি ট্রাম্প। তবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটা সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছেন তিনি। গত সপ্তাহে (১১ মার্চ) সৌদি আরবের জেদ্দায় বৈঠকে বসেন মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়া হয়। যাতে সম্মতি জানায় ইউক্রেন।
এরপর ট্রাম্পের প্রতিনিধি হিসাবে স্টিভ উইটকফ মস্কোয় গিয়ে এ বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করে এসেছেন। কিন্তু এখনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। যদিও ট্রাম্প বলছেন, পুতিনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা ‘খুব ভালো ও ফলপ্রসূ’ হয়েছে।
তথ্যসূত্র: এপি ও আল জাজিরা