Image description
 

লেবাননের সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দােলন হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান হাসান নাসরুল্লাহর দাফন (অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া) আয়োজন হতে যাচ্ছে আজ, যা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইসরাইলি বিমান হামলায় শহীদ হওয়ার পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুধু একটি শোকসভা নয়, বরং এটি হিজবুল্লাহর রাজনৈতিক শক্তির প্রদর্শনী হিসেবেও দেখা হচ্ছে, যা সংগঠনটির দুর্বল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।ইসরাইলের সামরিক অভিযানের প্রথম পর্যায়ে নাসরুল্লাহ ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে এক বাঙ্কারে বৈঠকরত অবস্থায় বিমান হামলায় শহিদ হন।  নাসরুল্লাহ হিজবুল্লাহ সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়, দীর্ঘ সময় ধরে ইসরাইলের সঙ্গে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সংগঠনটিকে একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছেন। তার নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করেছে এবং তিনি আধুনিক আরব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেন।তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে, হিজবুল্লাহর শক্তিশালী এলাকায় অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে শত শত হাজার সমর্থক উপস্থিত হওয়ার আশা করা হচ্ছে। হিজবুল্লাহ এছাড়াও হাশেম সাফিয়েদ্দিনকে সম্মান জানাবে, যিনি নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে ছিলেন, তিনিও ইসরাইলি হামলায় নিহত হন। সাফিয়েদ্দিনকে আলাদা করে সমাহিত করা হবে সোমবার।

 

যুদ্ধের পর হিজবুল্লাহ ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে, হাজার হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং সংগঠনটির সমর্থিত অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংস হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে মিত্র হারানোও এই ক্ষতির সঙ্গে যুক্ত, যা হিজবুল্লাহর ইরান থেকে অস্ত্র সরবরাহ রুটে বাধা সৃষ্টি করেছে।রাজনৈতিকভাবে হিজবুল্লাহ লেবাননে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করছে।  সম্প্রতি লেবাননের নতুন সরকার গঠনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হয়নি হিজবুল্লাজ এবং সর্বশেষ মন্ত্রিসভার নীতিমালায় তাদের অস্ত্রবাহী অবস্থানকে বৈধতা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়নি।হিজবুল্লাহর নিকটস্থ এক ধর্মীয় নেতা শেখ সাদেক আল-নাবুলসি বলেছেন, এই দাফন অনুষ্ঠান হিজবুল্লাহর উপস্থিতির বার্তা হিসাবে কাজ করবে।  তিনি বলেন, এটি হিজবুল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণের লড়াই হবে।এই অনুষ্ঠানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং ইরাক ও ইয়েমেন থেকে প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবেন। ইরাক সরকার বৈরুত পৌঁছানোর জন্য অতিরিক্ত ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে।নাসরুল্লাহর মৃত্যুর ফলে ইরানকে একটি বড় ধাক্কা লেগেছে, কারণ ১৯৮২ সালে ইরানই হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছিল ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পসের মাধ্যমে। তার ক্ষতি আঞ্চলিক শিয়া মিলিশিয়াদের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ আঘাত, যারা তাকে তাদের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলগত সংগ্রামের একজন মূল নেতা হিসেবে দেখত।তার মৃত্যুর পর, নাসরুল্লাহ প্রথমে তার পুত্র হাদি’র পাশে সমাহিত হন, যাকে ১৯৯৭ সালে হিজবুল্লাহর হয়ে লড়াই করার সময় হত্যা করা হয়েছিল। তার আনুষ্ঠানিক দাফন স্থগিত রাখা হয়েছিল যতক্ষণ না ইসরাইল দক্ষিণ লেবানন থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহার শুরু করে। হিজবুল্লাহ এবার নতুন বার্তা দিতে চায়, যা তাদের অস্তিত্ব এবং অঞ্চলে প্রভাবের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।