
ইউক্রেনের ভূখণ্ডে থাকা খনিজে সম্পদে বেশ আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে কিয়েভের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ওয়াশিংটনের একটি প্রতিনিধি দল। খনিজ উত্তোলন নিয়ে কিয়েভকে কড়া বার্তা দিয়েছে তারা। খনিজে ভাগ না দিলে ইউক্রেনে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রতিনিধি দলটি। বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত তিনটি সূত্র ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট খনিজ নিয়ে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি প্রস্তাবনা দেন। তবে বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। এরপরেই স্পেসএক্সের মালিকানাধীন স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পরই কিয়েভের ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশটির সামরিক বাহিনী বর্তমানে স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।
গত বৃহস্পতিবার জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত কেইথ কেলোগ। সেই বৈঠকে খনিজ ও ইন্টারনেট ইস্যুটি উঠে আসে বলে একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। ওই সূত্র বৈঠকটিতে উপস্থিত ছিল বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সূত্র বলেন, বৈঠকটি হয়েছে খুবই গোপনীয়ভাবে। ওই বৈঠকে মার্কিন দূত বলেন, খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তিতে না পৌঁছানো গেলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হতে পারে।
ওই সূত্র বলেন, স্টারলিংকের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর হয়ে গেছে ইউক্রেন। এটিকে তারা তাদের ‘নর্থ স্টার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। স্টারলিংককে হারানো যুদ্ধের ময়দানে তাদের জন্য ব্যাপক আঘাত হিসেবে গণ্য হবে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ট্রাম্প প্রশাসন আসার পর থেকে নিশর্ত সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সহায়তার জেরে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে থাকা ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের খনিজ সম্পদে ভাগ দিতে হবে।
এর জেরে গত শুক্রবার জেলেনস্কি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনীয় দল চুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একইদিনে ট্রাম্প বলেন, আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছিতে রয়েছি।
২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এরপরেই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগে, যা এখনো চলমান। মস্কোর হামলার জেরে কিয়েভের ইন্টারনেট ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিক সে সময় কিয়েভকে সহায়তায় এগিয়ে আসে ট্রাম্পের সহযোগী ইলন মাস্ক। তার স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রাখছে কিয়েভের সামরিক বাহিনী। যদি স্টারলিংক তাদের সেবা দেওয়া বন্ধ করে দেয় তাহলে যুদ্ধের ময়দানে অনেক পিছিয়ে পড়বে তারা।
এ বিষয়ে আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র ফেলো মেলিন্ডা হারিং বলেন, ‘ইউক্রেনের ড্রোন হামলা ও সামরিক বাহিনীর কৌশলের জন্য স্টারলিংক মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্টারলিংককে হারানো মানে যুদ্ধে তারা হেরে যাওয়া।’
এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাস, হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেননি। স্পেসএক্সও এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।