
স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধ-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে পোল্যান্ড। শিশুরা এই প্রশিক্ষণ উপভোগ করছে, তাদের অভিভাবকরাও গর্বিত৷
গুলি চালানোর বাধ্যতামূলক এমন প্রশিক্ষণ ইউরোপে অনন্য৷ ভবিষ্যতে পোল্যান্ডকে রক্ষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও প্রস্তুত রাখতে এই প্রশিক্ষণ৷
প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণী অবধি পড়াশোনার সুযোগ আছে এখানে। বিদ্যালয়টিতে ভিন্নমতকেও স্বাভাবিকভাবে নেয়া হয়৷ তবে এটির ব্যায়ামাগারে ঘটে এক অস্বাভাবিক ঘটনা৷ সেখানে ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সি শিশুরা অ্যাসল্ট রাইফেল ও পিস্তল চালানো শেখে। প্রধান শিক্ষক ইভা গোলিনস্কার তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ হয়৷
তিনি বলেন, ‘‘পোলিশ বিদ্যালয়গুলোতে এটা বাধ্যতামূলক বিষয়৷ এবং শুধুমাত্র আগ্নেয়াস্ত্র একত্রিকরণ এবং পরিচালনা শেখানো হয়৷ আমি মনে করি, বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে এই প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।''
গোলিনস্কা প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের দিকে আলোকপাত করেছেন৷ পোল্যান্ড বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত হওয়ায় নাগরিকদের দ্রুত অস্ত্র চালানো শেখাচ্ছে।
স্কারশেভের মেয়র ইয়াসেক পাউলি বলেন, ‘‘তারা গুলি চালানোর জন্য খুব তরুণ নয়, কারণ, অন্যান্য ক্রীড়ার মতো গুলি চালানোর আগ্রহও অল্প বয়স থেকেই গড়ে ওঠে৷ একারণে সব শিক্ষার্থীর জন্য আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।''
তারা অবশ্য তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করে না৷ কিন্তু লেজার ব্যবহার করে। সবুজ আলোর অর্থ হচ্ছে গুলি লেগেছে৷ ক্রজিসটফ পাপাদিস এই পদ্ধতির উদ্ভাবক ও প্রচারক৷ তার হাতে এখন অনেক কাজ৷ তিনি বলেন, ‘‘পোল্যান্ডে আঠারো হাজার বিদ্যালয় রয়েছে৷ সুরক্ষা প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তাদের সবাই এই উপকরণ পাবে৷''
পোল্যান্ডে তিনমাস আগেও গুলি চালানোর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল না। তবে বাধ্যতামূলক হওয়ায় অভিভাবকরা অভিযোগও করছেন না৷ মনিকা স্টোলিনস্কা নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে আমাদের শিশুরা ইতিহাসের সঠিক দিকে থাকতে চায়৷ তারা দেশ রক্ষায় এবং দেশপ্রেমিক হতে আগ্রহী৷''
আরেক অভিভাবক আলিনা লাবুৎস্কার বলেন, ‘‘আমার মেয়ে ১৪ বছর বয়সি এবং অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী৷ আমি মনে করি, সে ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে সক্ষম এবং জীবনে কী করতে চায় জানে।''
গঁদাইস্কে ক্রজিসটফ গংশরের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে৷ তিনি বিদ্যালয়ে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণকে অস্ত্রবান্ধব পোলিশ সমাজের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ৷ বর্তমানে সম্ভবত ইউরোপের অন্যতম উদার আইন এখানে রয়েছে৷ পোল্যান্ড অবশেষে এই সিদ্ধান্ত পৌঁছেছে যে আমরা বৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারি৷ প্রক্রিয়া খুব সহজ৷ বলতে গেলে পোল্যান্ডে ড্রাইভিং লাইসেন্সের চেয়ে বন্দুকের লাইসেন্স পাওয়া সহজ৷''
গুলি চালানোর বাধ্যতামূলক এই প্রশিক্ষণ ইউরোপে অনন্য৷ ভবিষ্যতে পোল্যান্ডকে রক্ষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও প্রস্তুত রাখতে এই প্রশিক্ষণ৷ যদিও শিশুরা আপাতত এটাকে মজা হিসেবেই নিচ্ছে৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে