ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিল মিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্থ বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে ফেইক আইডি ব্যবহার করে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। একই সাথে ভুক্তভোগী সম্পর্কে অভিযুক্ত তানজিলকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল হকের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ ও শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিল মিয়া 'রাতুল সিকদার' নামের একটি ফেইসবুক ফেইক একাউন্ট থেকে চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানিমূলক অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মেসেজ দিত এবং তাকে রুমডেটের প্রস্তাবসহ ভিডিও কল দিয়ে যৌন ইঙ্গিত করত। অভিযুক্ত তানজিলের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ভিডিও কল দিয়ে যৌন ইঙ্গিত করার একটি ভিডিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে এসেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর এক সহপাঠী মো. নাইম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, অভিযুক্ত তানজিলের একটি ফেইড একাউন্ট রয়েছে যা দিয়ে সে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ মেসেজ দিত। সে তাকে (ভুক্তভোগীকে) রুমডেটের প্রস্তাব ও ফেইক একাউন্ট থেকে তানজিলের উলঙ্গ ছবি পাঠাত।
তিনি ডেইলি ক্যম্পাসকে বলেন, তানজিল ভুক্তভোগীর নামে এআই দিয়ে গুজব তৈরি করে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে হুমকি দেয় এবং শারীরিক সম্পর্ক না করলে এআই দিয়ে বিভিন্ন ছবি এডিট করে বা চ্যাটিং মেক করে এগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল করে দেবার হুমকি দেয়।
এছাড়াও তিনি বলেন, 'তানজিল ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ভিডিও কল দিয়ে যৌন ইঙ্গিত করেছে যার একটি ভিডিও সে( ভুক্তভোগী) সেভ করে রেখেছে।'
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর আরেক সহপাঠী মিলন খান বলেন, 'তানজিলের ঘনিষ্ট বন্ধু মো সামিউল হক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নামে নাইমের সাথে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে বলে মিথ্যা কথা বলে। যার পরিপ্রক্ষিতে তানজিল ভুক্তভোগীকে কুপ্রস্তাব করার সাহস পায় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'তানজিল মিয়াকে যখন শনাক্ত করা হয় তখন সে অভিযোগ স্বীকার করে বলে আমিতো করে ফেলছি এখন তোরা যদি এগুলো প্রকাশ করিস তাহলে মানুষ মজা নিবে। ওই মেয়ের নামটা সামনে আসবে এবং তার মানসম্মান যাবে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, 'আমারই বিভাগের দুইজন জুনিয়র সম্মিলিতভাবে ফেইক আইডি ব্যবহার করে আমাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ও কুপ্রস্তাব প্রদান করেছে।'
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আচরণ আমার জন্য মানসিকভাবে অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপমানজনক। বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমি উক্ত ঘটনার সকল প্রমাণাদি স্ক্রিনশট, কল রেকর্ড সংগ্রহে রেখেছি এবং প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি ও শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত তানজিল মিয়ার সহযোগী মো সামিউল হক বলেন, 'উক্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ভুক্তভোগী আমার বন্ধু এবং তার বয়ফ্রেন্ড নাইমও আমার পরিচিত। একদিন সে ( ভুক্তভোগী) আমাকে জানায়, সে ঢাকায় আমার বাসায় আসবে, কিন্তু তাদের আসার কথা থাকলেও আসেনি। এই তথ্যটুকুই আমি আমার বন্ধু তানজিলের সঙ্গে শেয়ার করি। এর বাইরে আমি আর কোনো তথ্য দিইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'পরবর্তীতে তানজিল নিজ উদ্যোগে ভুক্তভোগীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে এবং ব্ল্যাকমেইল ও হয়রানিমূলক আচরণ করে—যা সে নিজেই স্বীকার করেছে। এই বিষয়ে প্রায় দুই ঘণ্টার কল রেকর্ড আমার কাছে রয়েছে, যেখানে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে যে এই ঘটনায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত তানজিল মিয়া তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ শিকার করে বলেন, 'ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক সমস্ত ভুলই আমার। বিষয়টি নিয়ে তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং সেদিন আমাদের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।'
এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সিরাজুল হক বলেন, 'আমি ঢাকার বাহিরে আছি, তাই এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না আমি। তবে অভিযোগ যদি সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার তার যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।'