
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) দক্ষিণবঙ্গের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও বিধিমালায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (পাকসু)-এর গঠনতন্ত্র। ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাকসু নির্বাচনের দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে, আর কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। অথচ পবিপ্রবির বিধিমালার ক্রমিক ১১-এর ১৩৯ থেকে ১৫৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (পাকসু) ও হল সংসদের বিস্তারিত গঠনতন্ত্র উল্লেখ থাকলেও গত ২৪ বছরেও এখানে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
জানা গেছে, প্রতিবছর ভর্তি ফি ও সেমিস্টার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের জন্য নেওয়া হয় বার্ষরিক ফি। তবে এ অর্থের ব্যয় নিয়ে রয়েছে ব্যাপক অস্পষ্টতা। টিএসসিতে ছাত্র সংসদের জন্য বরাদ্দ একটি বড় কক্ষ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তীকালে অন্য এক সংগঠনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়—যা প্রশাসনের গড়িমসি ও উদাসীনতার স্পষ্ট প্রতিফলন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সম্প্রতি ‘পবিপ্রবিয়ান’ ফেসবুক গ্রুপে পরিচালিত এক গণভোটে অংশ নেন প্রায় দুহাজার শিক্ষার্থী। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী ‘আমরা পাকসু চাই’—এই দাবির পক্ষে ভোট দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই দাবির প্রসঙ্গে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়ে যায়, তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও হবে।’
উপাচার্যের এমন আশ্বাসের পর ছাত্র সংসদ নিয়ে আগ্রহ বাড়ে শিক্ষার্থীদের। তবে পরবর্তীতে এ বিষয়ে উপাচার্যের আর কোনো পদক্ষেপ বা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের ২০২৩–২৪ সেশনের শিক্ষার্থী শামীমা সুলতানা এলেন বলেন, “পাকসু হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। এতে ভবিষ্যতে কোনো একক পক্ষের আধিপত্য থাকবে না। আমরা পাকসু চাই—অনুসরণ নয়, দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। এখন সময় এসেছে অনলাইন দাবির বাইরে এসে সরাসরি অবস্থান জানানোর।”
কৃষি অনুষদের ২০২২–২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “পবিপ্রবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পথ খুলে দেবে। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যেই নির্বাচন হয়েছে—তাই দ্রুত পাকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ কামনা করছি।”
পবিপ্রবি ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম রাতুল বলেন, “আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই—বাকিটা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করছে।”
পবিপ্রবি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. জান্নাতীন নাঈম জীবন বলেন, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকা জরুরি। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে রোডম্যাপ ও তফসিল ঘোষণা করবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বলেন, “আমি ঢাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত আছি এবং এ বিষয়ে আপাতত বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলতে পারবেন”
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, “প্রশাসন এখনো এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি এবং কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি। আমি উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে কাজ করি—তিনি নির্দেশ দিলে তখনই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে।”