Image description

সম্প্রতি রাজধানীর কাকরাইলে পুলিশ, সেনা ও সাদা পোশাকধারীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। যা সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনার পর পরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় ও বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে, চবিতে হামলার ঘটনা দেশে নজিরবিহীন। এছাড়া, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্র সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দুইটি ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, অন্যটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ফলে দেশের তিন বিশ্ববিদ্যালয়েই একধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ভাড়া বাসার এক দারোয়ান ছাত্রীকে মারধর করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (৩০ আগস্ট) রাতে চবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের স্থানীয়দের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরের দিন স্থানীয়দের সশস্ত্র হামলায় অন্তত দেড় হাজার শিক্ষার্থী আহত হন, গুরুতর আহত শতাধিক। এর মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিউর রহমান রাজু ও নাইমুল ইসলামকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। এদিন দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন চবি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে, যা সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে জানানো হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে যৌথবাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আরও জানা যায়, গুরুতর আহতদের সারাদিন ১১টি ক্যাম্পাস বাসে চবি মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক (চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরমধ্যে তিন শতাধিক আহত শিক্ষার্থী চমেকে ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা চবি মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। রবিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ফারহানা ইয়াসমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গতকাল শনিবার রাত থেকে রবিবার পর্যন্ত আহত ১৫০০-এর বেশি। সারাদিন ১১টি ক্যাম্পাস বাসে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে গুরুতর আহত ছিল ১০০ জন এবং আশঙ্কাজনক ১০ জন। বাকিরা মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পর রবিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সদরের এসপি ও ডিসির উপস্থিতিতে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে বহিরাগতরা। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। 

জানা গেছে, কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছিলেন। আন্দোলন চলাকালে রাত ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে বহিরাগত দুর্বৃত্তরা নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা মিলনায়তনের তালা খুলে ভেতরে আটকা শিক্ষকদের বের করে আনে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদেই এ হামলা চালানো হয়। ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে রাত সাড়ে ৯টায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের সোমবার সকাল ৯টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ মোড় এলাকায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অবস্থান দেখা যায়। পরে তারাই শিক্ষার্থীদের ওপর এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ তাদের।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক শিক্ষার্থী বলেন, ‘যৌক্তিক দাবি চাওয়ায় আমাদের ওপর যেভাবে প্রশাসন বহিরাগতদের লেলিয়ে দিল, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই ফ্যাসিস্ট প্রশাসন আমাদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী লীগের মতই, তাদের মতামত আমাদের ওপর জোর করেই চাপায় দিয়েছে।’

প্রসঙ্গত, কম্বাইন্ড ডিগ্রি বাস্তবায়নে আয়োজিত একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ না হওয়ায় সভায় উপস্থিত উপাচার্যসহ সব শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ২২৭ জন শিক্ষক অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এর আগে, বেলা ১১টায় কম্বাইন্ড ডিগ্রি ইস্যু সমাধানে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শুরু হয়।

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিতরণের শেষ দিন সকল কার্যক্রম পণ্ড করে দেন শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। এসময় তারা রাকসুর কোষাধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা মেরে বিক্ষোভ করেন। শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীর নেতৃত্বে রাকসু নির্বাচনের সকল কার্যক্রম ভেস্তে দেওয়া হয়; ভাংচুর করা হয় চেয়ার-টেবিল। এরপর নির্বাচন কমিশন অফিসে তালা লাগিয়ে অবস্থান শুরু করে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

পরে সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে এসে শাখা ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বাধার সম্মুখীন হন। আম্মার নিজেও তালা মারা গেটের সামনে অবস্থান করা শুরু করেন। এসময় বিএনপিপন্থি শিক্ষকরা এসে শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদল সূত্রে জানা যায়, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই মূলত কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এ সময় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করছি তবে তারা আমাদের দাবি মানছেই না। তারা রাকসুর ফি দিয়েছে কিন্ত তারা ভোটার হতে পারছে না। আমরা এই বৈষম্য নিরসন করেই কর্মসূচি শেষ করব।

এরই মাঝে, রাকসু নির্বাচনের মনোনয়ন তুলতে এসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন রাবি শাখা ছাত্রশিবির। বক্তব্য চলাকালে শাখা সভাপতির বুকে বোতল ছুঁড়েন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। সব মিলিয়ে রাবি ক্যাম্পাসে বর্তমানে উত্তেজনা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে।