Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উর্দু বিভাগে অধিকতর যোগ্যপ্রার্থীদের বাদ দিয়ে ‘কম যোগ্যতাসম্পন্ন’ আওয়ামী অনুগতদের শিক্ষক নিয়োগে (প্রভাষক) সুপারিশ করার অভিযোগ উঠছে নিয়োগের সিলেকশন বোর্ডের বিরুদ্ধে। সিলেকশন বোর্ডের এই সুপারিশ আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে সিলেকশন বোর্ডের এই সুপারিশ বাতিল করে শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী সর্বোচ্চ মেধা, যোগ্যতা ও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সুপারিশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুপারিশবঞ্চিত প্রার্থী ও বিভাগের অ্যালামনাইরা।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে দুটি স্থায়ী প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য গত ১৪ আগস্ট সিলেকশন বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে বোর্ডের সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। বোর্ডে ৩০ এর অধিক প্রার্থী অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে বোর্ড থেকে সুপারিশ করা হয়েছে মো. শফিকুল ইসলাম সিহাব ও মোছা. আলপনা আক্তার নামে দুইজন প্রার্থীকে। যাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম ফলাফল সম্পন্ন বলে অভিযোগ তুলছেন সুপারিশবঞ্চিত প্রার্থী ও বিভাগের অ্যালামনাইরা। যাদের কোনো গবেষণা কর্মও নেই বলে জানা গেছে অভিযোগপত্র সূত্রে।

এই সিলেকশন বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ ছাড়াও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা ও বিভাগের দুইজন অধ্যাপক ড. মো. ইস্রাফিল ও অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের এই বিভাগে গত ১৫ বছর ধরে শিক্ষকদের প্রহসন, প্রশাসনিক পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অপতৎপরতার কারণে ২০১১, ২০১৪, ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০২০ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং ভাইভা গ্রহণের (সিলেকশন বোর্ড) পরও রহস্যজনকভাবে কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিসেম্বরে দুইজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের হয়। পরবর্তীতে এই নিয়োগের ভাইভা গ্রহণ হয় চলতি মাসের ১৪ তারিখে।

এই নিয়োগের অধিকতর সুপারিশবঞ্চিতরা অভিযোগ করেছেন, সিলেকশন বোর্ড সকল আইন এবং নিয়ম-নীতি পাশ কাটিয়ে গত ১৫ বছর ধরে যে সকল প্রার্থী অধিকতর যোগ্যতা সম্পন্ন (ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট, পিএইচডি, এমফিল ধারী ফোর ফার্স্ট ক্লাস, ডাবল ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট, একাধিক গোল্ড মেড্যালিস্ট, কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলে প্রথম স্থান অধিকারী) এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের কর্তৃক চরম বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার সিনিয়র শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে পুরাতনের তকমা লাগিয়ে অযোগ্য আখ্যা দিয়ে অনেক কম যোগ্যদের প্রভাষক পদে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষা-গবেষণা ও অভিজ্ঞতাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত দু'জন প্রার্থীর মধ্যে একজন মো. শফিকুল ইসলাম সিহাব। যিনি সরাসরি পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী আলহাজ্ব মেছবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্য জোটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক সচিব পদে সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। যার প্রমাণ তারা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

তাছাড়া এই নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে প্রভাষক পদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিএইচডিধারীদের নিয়োগে অগ্রাধিকার প্রদানের শর্ত ছিল। কিন্তু সিলেকশন বোর্ড এই শর্ত লঙ্ঘন করে রহস্যজনকভাবে তুলনামূলক অনেক কম যোগ্যতা সম্পন্ন অন্য আরেকজন মোছা. আলপনা আক্তারকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে। এই প্রার্থী পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের  একান্ত অনুগত কর্মী, যার প্রমাণও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন এই নিয়োগের অধিকতর সুপারিশ বঞ্চিতরা।

এই নিয়োগের অধিকতর সুপারিশ বঞ্চিতরা এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে মেধা, যোগ্যতা ও সিনিয়টির ভিত্তিতে পক্ষপাতমুক্ত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। পাশাপাশি  নিয়োগের সকল ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুসরণ করে ভাইভা কার্ড বঞ্চিতদের কার্ড প্রদানের ব্যবস্থা করে সামগ্রিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নিয়োগ সম্পন্ন করতে অনুরোধ হয়েছে।

এই নিয়োগের ভাইভা বঞ্চিতদের একজন ড. এ সালাম। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার পিএইচডি ডিগ্রির পাশাপাশি ৪-৫টি গবেষণা আর্টিকেলও রয়েছে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে আমি সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পেতাম।

‘‘কিন্তু আমার এসএসসি ও এইচএসসিতে ফলাফল বেধে দেওয়া শর্তের চেয়ে কম। যদিও একটির ফল শিথিল করা হয়েছে। তবে অপরটির জন্য আমাকে ভাইভা বঞ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু একই সমস্যা নিয়ে একরকম অনেক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যত কড়াকড়ি আমার জন্য কেন, প্রশ্ন এই নিয়োগ প্রত্যাশীর। ফলে এটা আমি বৈষম্য বলে মনে করি আমার ওপর। যা চব্বিশের ৫ আগস্ট পরবর্তী কাম্য নয়।’’ 

জানতে চাইলে উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম মাওলা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টতার যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। আর বোর্ডের সকলের মতামত অনুযায়ী একাডেমিক ফল ও মৌখিক পরীক্ষায় যারা ভালো করেছে তাদেরকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব বা অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।