Image description

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক আছেন মাত্র ১৯৪ জন। এর মধ্যে অন্তত ৫৪ জনই আছেন শিক্ষা ছুটিতে। ফলে শিক্ষক সঙ্কটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। এতে সেশনজটের শঙ্কাও বাড়ছে। শিক্ষকদের নিতে হচ্ছে অতিরিক্ত চাপ।

অভিযোগ আছে, সংকটের ফলে অনেক শিক্ষককে বাধ্য হয়ে নিতে হচ্ছে ১২থেকে ১৪টি কোর্স। আবার অনেকের প্রশাসনিক কাজে পাশাপাশি পাঠদান দিতে হচ্ছে নিজ বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগ মাত্র দু’জন শিক্ষক দিয়ে পরিচালনা করার নজিরও  রয়েছে।

বর্তমানে ১৪০ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে ১৫৬ ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। গত বছর শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায় বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে পদ ছাড় হচ্ছে না।

জানা গেছে, কয়েকটি বিভাগে তিন থেকে চারজন শিক্ষক রয়েছে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ১০ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য ১৯৪ জন শিক্ষক পর্যাপ্ত নয়। এর মধ্যে যে ৫৪ জন আছেন শিক্ষা ছুটিতে, তাদের মধ্যে কয়েকজন ছুটি শেষ করে ফিরছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বর্তমানে ১৪০ জন শিক্ষক নিয়ে চলছে ১৫৬ ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম। গত বছর শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রাম অনুযায় বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে পদ ছাড় হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. আরিফুল রহমান অনিক বলেন, ‘আমরা যখন উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি, তখন আশা করি, জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হব। কিন্তু বর্তমান শিক্ষক সংকট সে স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করছে। আমাদের বিভাগে মাত্র পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে কোর্স চালানো হচ্ছে, যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। যে কারণে ক্লাসের মান কমে যাচ্ছে। এবং  প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’ 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে একজন একাধিক কোর্স নিচ্ছেন। এটি তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। আমাদের পাঠদানেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।’

শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বলেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সংকট চলছে, যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, সিলেবাস অসম্পূর্ণ থাকা এবং পর্যাপ্ত নির্দেশনার অভাব তাদের অ্যাকাডেমিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাদের আগ্রহও কমে যাচ্ছে।’

শিক্ষকদের আবাসন সংকটও নিয়োগ কার্যক্রমে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন ডিনের জন্য মাত্র চারটিটি কক্ষ রয়েছে। নতুন শিক্ষক এলে তাদের বসবাসেরও পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড. সুজন চন্দ্রপাল বলেন, ‘এ সংকটের কারণে বর্তমানে শিক্ষকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। তাদেরকে প্রয়োজনের চেয়েও অতিরিক্ত চাপ নিতে হচ্ছে। যার ফলে শিক্ষা ও গবেষণায় বিরূপ প্রভাব পরতেছে। এর থেকে সমাধানের পথ হচ্ছে ইউজিসি থেকে ছাড়কৃত পদে নিয়োগ সম্পূর্ণ করা এবং যে-সকল পদ ছাড় হয় নেই, সেসব পদ ছাড় করে নিয়ে আসা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন বলেন, ‘গত বছর বদরুজ্জামান ভূঁইয়া (সাবেক উপাচার্য) স্যার থাকাকালীন লোকপ্রশাসনসহ দুয়েকটি ডিপার্টমেন্টে কিছু সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ হয়ছে। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, ইউজিসি থেকে আমাদের পদ ছাড় হচ্ছে না। পদ ছাড়করনের জন্য আমাদের ভাইস-চ্যান্সেলর ও কর্তাব্যক্তিরা  ইউজিসির সাথে কথা বলেছে, কিন্তু পদ ছাড়  হচ্ছে না।’

শিক্ষা ছুটিতে গিয়ে ফিরে না আসা শিক্ষকদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ফিরে না আসা শিক্ষকদের পরিমাণ খুব কম। যারা ফিরে আসছেন না, তাদের কাছ থেকে আর্থিক জরিমানাসহ সে টাকা আদায় করে আমাদের বিধিগত প্রক্রিয়া চলছে।’