Image description

গত এক মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তিন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীরা হলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাবরিনা রহমান শাম্মী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাবিব রিয়াদ এবং ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আহাদ হোসেন।  

আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাবরিনা রহমান শাম্মী প্রেম ঘটিত কারণে, মো. আহাদ হোসেন চাকরি ও ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন, আরেক শিক্ষার্থী রিয়াদ ঠিক কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন তা জানা না গেলেও হতাশা থেকেই এ পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা করছেন নিকটজনেরা। 

তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সেলিং সেন্টারের পাশাপাশি ৪০টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে রয়েছেন ৮০ জন ছাত্র উপদেষ্টা। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই উপদেষ্টারা দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয় এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে ছাত্র উপদেষ্টাদের কাছে যেতে দ্বিধাবোধ করেন, কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন সহায়ক পরিবেশ বিরাজমান নয়। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, একাডেমিক জটিলতা ও ব্যক্তিগত সংকটে পড়েও শিক্ষার্থীরা যথাযথ পরামর্শ বা সমাধান পাচ্ছেন না, যা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক মঙ্গল ও একাডেমিক সাফল্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।  

এ বিষয়ে প্রাণরসায়ন ও অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নওশীন নাওয়ার জয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সংকট শিক্ষার্থীদের হতাশায় ঠেলে দিতে পারে, যা কখনো কখনো আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক পরিণতি ডেকে আনে। তবে আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, সংকট মোকাবিলাই জীবন। কিন্তু মেডিকেল কাউন্সেলর ও বিভাগীয় ছাত্র উপদেষ্টাদের উদাসীনতার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পায় না। তাই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করা ও সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরি করা জরুরি, যাতে কেউ একা বোধ না করে।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব তৌসিব মাহমুদ সোহান বলেন, "সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য একজন শিক্ষার্থী যেসব উপকরণ প্রয়োজন, তার অনেক কিছুই পুরান ঢাকা ও জবিতে অনুপস্থিত। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের একরাশ হতাশা নিয়ে দিন পার করতে হয়। কেউ আবার হতাশার কাছে হেরে গিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। আমি চাই সংকটগুলো কাটুক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। অনেক সময় তারা তাদের চেপে রাখা হতাশাগুলো কারও কাছে বলে না। এ বিষয়ে প্রতিটি বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টাদের আরও বেশি সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি কাউন্সেলিং সেবা, সহমর্মিতামূলক পরিবেশ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসতে পারে।’

হতাশা প্রকাশ করে প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ জন চেয়ারম্যান ও ৮০ জন ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছেন। আমি সকল শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করি, তাদের থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে। আমার অফিসের দরজা সবসময় শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা থাকে। যে কেউ এসে আমাকে তার সমস্যার কথা বলতে পারে। আমি চাই সবাই মন খুলে বলুক, যেন তাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারি।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য ও সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠন।