
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মনোভাব ও পছন্দ জানতে এক জরিপ পরিচালনা করেছে ‘সোচ্চার’। ৮ থেকে ১১ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত পরিচালিত এ জরিপে অংশ নেন মোট ৮০৩ জন শিক্ষার্থী।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪১% নারী, ১৩% অমুসলিম, এবং ৪% অবাঙালি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী। এছাড়া ৪৬% শিক্ষার্থী আবাসিক, ২৯% ক্যাম্পাস সংলগ্ন অনাবাসিক, এবং ২৫% শহর এলাকায় বসবাসরত অনাবাসিক শিক্ষার্থী।

ভোটে আগ্রহ ও দৃষ্টিভঙ্গি
-
৮৬.৭% শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা চাকসু নির্বাচনে ভোট দেবেন।
-
৫৯% শিক্ষার্থী মনে করেন, ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের প্রভাব পড়বে চাকসু ভোটে।
-
৮৭% শিক্ষার্থী বলেছেন, তাঁরা প্যানেল দেখে নয়, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন।
-
৬০% শিক্ষার্থী ভোট দেওয়ার সময় গুরুত্ব দেবেন এমন প্রার্থীকে, যিনি একই সঙ্গে ভালো ছাত্র ও ভালো অ্যাক্টিভিস্ট।
নির্যাতন ও নেতৃত্ব বিষয়ে মতামত
জরিপে দেখা যায়, ১৯% শিক্ষার্থী নিজে কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এবং ৪৫% শিক্ষার্থী অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন।
তবে আশার খবর — ৫৩% শিক্ষার্থী বিশ্বাস করেন, নির্বাচিত চাকসু প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে পারবেন।

নেতৃত্বের গুণাবলি হিসেবে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি মূল্য দিয়েছেন—
ব্যক্তিত্ব, সততা, ভালো সংগঠক, ভালো বক্তা, প্রগতিশীল মানসিকতা, এবং ভালো শিক্ষার্থী হওয়া।
অন্যদিকে, মাদকাসক্ত, চাঁদাবাজ, যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িত, ধর্মবিদ্বেষী বা নির্যাতনকারী প্রার্থীদের প্রতি ভোটারদের অনাগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে।
নারী ও লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি
প্রার্থীর লিঙ্গ ভোটে বড় প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন ৮২% অংশগ্রহণকারী।
মাত্র ১৫% পুরুষ প্রার্থীকে প্রাধান্য দেন, আর ৩% নারী প্রার্থীকে।

ভোটের প্রেডিকশন: শীর্ষে ছাত্রশিবির
জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এখনও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আনডিসাইডেড ভোটার রয়েছেন (VP পদে ৫৮.৫%)।
তবে সোচ্চার গবেষকদলের প্রেডিকশন অনুযায়ী, আনডিসাইডেড ভোটারদের মধ্য থেকে ছাত্রশিবির পেতে পারে ৪৬.৫% ভোট, ছাত্রদল পেতে পারে ২৭%, এবং অন্যান্য প্যানেল পাবে ২৬.৫%।
এ হিসেবে, আনডিসাইডেড ভোট যোগ করলে সম্ভাব্য মোট ফলাফল দাঁড়াচ্ছে—
-
ভিপি (VP) পদে: ছাত্রশিবির ৫০.৩%, ছাত্রদল ২২.৩%
-
জিএস পদে: ছাত্রশিবির ৫১.৩%, ছাত্রদল ১৭.৪%
-
এজিএস পদে: ছাত্রশিবির ৪০.৮%, ছাত্রদল ২৮.০%
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি
শিক্ষার্থীদের শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলো হলো —
আবাসন ও পরিবহন সংকট সমাধান, ক্যাম্পাস নিরাপত্তা, সততা ও স্বচ্ছতার চাকসু,
খাবারের মান উন্নয়ন, এবং প্রশাসনিক সংস্কার (যেমন সেশনজট কমানো, শিক্ষক মূল্যায়ন, লাইব্রেরি উন্নয়ন ও রেজিস্ট্রার ভবনের ডিজিটাল সার্ভিস)।
উপসংহার
চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের এই উচ্ছ্বাস ও মতামত ইঙ্গিত দিচ্ছে— এবার ভোট হবে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সচেতন।
জরিপে ভোটারদের বড় অংশই ‘যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার’ পক্ষে, যা ইতিবাচক পরিবর্তনের আশাও জাগায়।
চাকসু নির্বাচনের এই জরিপের ফলাফল এখন আলোচনার কেন্দ্রে — বাস্তব নির্বাচনে এই প্রেডিকশন কতটা মেলে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।