
কুমিল্লা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া তিন সহপাঠী একসাথে অস্ট্রেলিয়ার ভিন্ন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে বর্তমানে পড়াশোনা করছেন। তাদের এই অর্জন পরিবারসহ সকলের যেমন গর্বের, তেমনই বন্ধুত্বের অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের শিক্ষক ও সহপাঠীরা বলছেন, এই তিন শিক্ষার্থীর একসাথে কলেজ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাত্রা সত্যিই এক অনুপ্রেরণাময় উদাহরণ। তাদের সাফল্য প্রমাণ করে স্বপ্ন দেখলে, সঠিক পরিকল্পনা করলে এবং একে অপরকে সমর্থন করলে উচ্চশিক্ষার পথে নানা বাধাকে অতিক্রম করা যায়।
কুমিল্লা সরকারি কলেজের ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ তিন মেধাবী শিক্ষার্থী হলেন- শাহনেওয়াজ ইসলাম নাদিম, ইব্রাহিম খলিল বিপ্লব ও কামরুল আমিন পিয়াস। বর্তমানে তারা অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন। এরমধ্যে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পিয়াস অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি ফেডারেশন ইউনিভার্সিটি, বেলারাত, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫% স্কলারশিপসহ ভর্তি হন।
পিয়াসের এই সাফল্য ও সাহস তার বন্ধুদের অনুপ্রাণিত করে এবং পরবর্তীতে নাদিম ও বিপ্লবও তাদের উচ্চশিক্ষার পথে এগিয়ে যায়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ায় যান বিপ্লব ও নাদিম। বিপ্লব ভর্তি হন মেলবোর্নের আরএমআইটি ইউনিভার্সিটিতে, নাদিম তাসমানিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন, সাথে ২৫% স্কলারশিপও পান দুইজনই।
তাদের যাত্রা সম্পর্কে বিপ্লব বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এখন একটি বড় সম্ভাবনার পথ হলো দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষা অর্জন করা। এতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয় এবং আমাদের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। এইচএসসি পরীক্ষার পর, আমার বন্ধু পিয়াস অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তার সফল যাত্রার পর তার সাথে আলোচনা করে আমিও সেই সিদ্ধান্তে উপনীত হই। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে আমরা এখানে আসতে পেরেছি। জীবন এগিয়ে যাওয়ার এই অভিজ্ঞতা এক অন্যরকম অনুভূতি।
তিনি আরও জানান, আমার দেশে থাকা বন্ধুদের বলি, তারা যেন আমাদের সঙ্গে এখানে চলে আসে কিংবা দেশেই দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষা অর্জন করে সফলতা অর্জন করে। ইনশাআল্লাহ, আমরা সবাই মিলে জীবনে সফলতা অর্জন করব।
বন্ধুদের সাথে এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কামরুল আমিন পিয়াস বলেন, একাই এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে, সবাই মিলে এগিয়ে চলাটাই বেশি আনন্দের ও অর্থবহ। দলবদ্ধভাবে চললে পথটা যেমন সহজ হয়, তেমনি সুন্দরও হয়। যখন ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা উদ্যোগগুলো এক হয়ে যায়, তখন তা গড়ে তোলে একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম যেখানে সম্ভাবনা ও সুযোগ দুটোই বহুগুণে বাড়ে।
দেশে পরিসংখ্যানে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত তাদের বন্ধু মুনতাসীর বিল্লাহ বলেন, আমার বিদেশে পড়াশোনা করা বন্ধুরা অবশ্যই অনুপ্রেরণা যোগায়, কারণ বাংলাদেশের পড়াশোনার সিস্টেম উন্নত দেশের তুলনায় ভালো না। যখন আশেপাশের বন্ধুদের দেখি তারা উন্নত দেশে গিয়ে পড়াশোনা করছে এবং তাদের জীবনযাত্রাও অনেক উন্নত, ওগুলো দেখে অনেক অনুপ্রেরণা পাই বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করতে।
পিয়াস, নাদিম ও বিপ্লব তিন বন্ধুর প্রধান স্বপ্ন হলো বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরা ও তাদের পিতামাতার এত বছর অর্থ, কষ্ট ও শ্রমের ঋণ পরিশোধ করা। বিদেশে পড়ার স্বপ্ন পূরণে পরিবার ছিল সর্বোত্তম সহায়তা; তাদের সমর্থন ছাড়া এটি অসম্ভব হয়ে উঠতো বলে জানান তারা। পাশাপাশি, তাদের প্রত্যাশা যেন সকল বন্ধু ও সহপাঠীও তাদের বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণে সক্ষম হয়।